1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'ইন্ডিয়া' জোটে থেকেও নেই মমতা, এটাই তার কৌশল

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেননি তিনি। আবার পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে নারাজ। একইসঙ্গে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন তৃণমূলনেত্রী।

https://p.dw.com/p/4c7ak
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ইন্ডিয়া জোট নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান কীছবি: Satyajit Shaw/DW

'ইন্ডিয়া'জোট তৈরি হওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ দেখিয়েছিলেন যারা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই জোটের থেকে নিজের দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল।

বস্তুত, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার 'ইন্ডিয়া' জোট ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর পর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরো বেশি সরব হয়েছেন মমতা। রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে ন্যায়যাত্রা করতে এসেছিলেন। সেখানেও তৃণমূল রাহুলের গাড়ির উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। বীরভূমে রাহুলের যাত্রা আটকানোরও চেষ্টা হয়েছে। শেষপর্যন্ত প্রশাসন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। জোটসঙ্গীর সঙ্গে সাধারণত এমন ব্য়বহার আশা করা যায় না।

এখানেই শেষ নয়, পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযোগ আনছে তৃণমূল। তাকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়ে দিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে একটি আসনও ছাড়া হবে না।

এত কাণ্ডের পরেও কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব মমতাকে নিয়ে নরম। মমতা যা-ই বলুন, বুধবারও রাহুল গান্ধী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের সঙ্গেই আছেন। আসন সমঝোতা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। তা মিটে যাবে। এই সমস্যাকে 'স্বাভাবিক' বলে দাবি করেছেন রাহুল। মালদহে রাহুলের যাত্রায় যখন তার গাড়ির উপর আক্রমণ হচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তখন মমতার সঙ্গে কথা বলছেন। সাংবাদিক বৈঠকেও রাহুলের গাড়ির উপর আক্রমণ নিয়ে কার্যত কোনো কড়া মন্তব্য করেনি কংগ্রেস নেতৃত্ব। অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট-- তৃণমূলের সঙ্গে জোট সম্পর্ক বজায় রাখতে মরিয়া কংগ্রেস। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ উত্তরপ্রদেশের মতো বিরাট রাজ্য না হলেও এখানে ৪২টি লোকসভা আসন আছে। কংগ্রেস আশা করছে, এর সিংহভাগ জোটের পক্ষে থাকবে। তৃণমূল একা লড়লেও শেষপর্যন্ত আসন জোটের পক্ষে থাকবে।

কংগ্রেস যা-ই মনে করুক, পশ্চিমবঙ্গে সেই তৃণমূল আর নেই। টানা ১৩ বছর এরাজ্যে তৃণমূল শাসন ক্ষমতায়। ফলে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাব বিভিন্ন স্তরে তৈরি হয়েছে। গত কয়েকবছরে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে জেলে গেছেন। চাকরির দাবিতে বছরের পর বছর ধরে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। রাজ্যে চাকরি নেই। শিল্প নেই। তার উপর বিজেপির হিন্দুত্ববাদী প্রচার রাজ্যের একশ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ১০ বছর আগেও যেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট ছিল ১০-১২ শতাংশ, এখন তা ৩৮ শতাংশেরও বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো করেই জানেন, দুই শতাংশ ভোট সুইং পশ্চিমবঙ্গের ভোট-চেহারা সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের ভোট শেয়ার ছিল ৪৮ শতাংশ, বিজেপির ভোট শেয়ার ছিল ৩৮ শতাংশ, কংগ্রেসের তিন শতাংশ এবং বামেদের ৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। সাড়ে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল জিতেছিল ২২টি আসন। কংগ্রেসের ভোট শেয়ার ছিল ছয় শতাংশ আর বামেদের সাড়ে ছয় শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে  বিজেপি সামান্য ভোট সুইং করালে গতবারের চেয়েও ভালো ফলাফল করতে পারে, একথা পোড়খাওয়া রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালোই জানেন। একইসঙ্গে তিনি জানেন, দলের ভিতরেও চূড়ান্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। বস্তুত, তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতার টানাপড়েন এখন সকলেরই জানা, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ওপেন সিক্রেট।

রাজনীতির রামমন্দির

এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মুসলিম ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসে ৩০ শতাংশ মুসলিম। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে সামনে রেখে এই ভোটের সিংহভাগ নিজের দখলে রাখতে চাইছেন মমতা। এই ভোট কোনোভাবেই তিনি ভাগ হতে দিতে চান না। তিনি জানেন, সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গটিকে যদি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্য বিষয় করে তোলা যায়, তাহলে মুসলিম ভোট তার দিকেই থাকবে। সেখানে রাজ্যের অন্য সমস্যাগুলি খানিকটা গৌণ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, তৃণমূল বিরোধী ভোট যদি বিরোধীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, তাহলেও তার সুবিধা। এবং সেখানেই কংগ্রেস এবং বামেদের ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে গেলে বিজেপি বিরোধী ভোট তিনটি দলের  মধ্যে ভাগ হবে। আর জোট-বিরোধী ভোট পুরোটাই বিজেপির কাছে যাবে। মমতা চাইছেন, তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিজেপি-কংগ্রেস-বামেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাক।

তাহলে সার্বিকভাবে জোটের কী হবে? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, দিল্লির মসনদের চেয়ে মমতার কাছে এখন অনেক বেশি জরুরি রাজ্যের মসনদ বাঁচানো। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে 'ইন্ডিয়া' যদি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পায়, তাহলে ভোট-পরবর্তী সমীকরণে তিনি আসন সমঝোতায় যাবেন। সে কারণেই, এখন ধরি মাছ না ছুঁই পানির কৌশল নিতে চাইছেন তিনি। আর সে কারণেই কংগ্রেস এবং বামেদের প্রায় প্রতিটি সভায় আক্রমণ করছেন তিনি। রাজনীতিতে নেগেটিভ পাবলিসিটি বলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। শাসকদল যখন নির্দিষ্ট কোনো বিরোধী দলকে লাগাতার আক্রমণ করতে থাকে, তখন বোঝা যায়, সেই দলটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। বাম এবং কংগ্রেসকে বিজেপির সমান সমান প্রতিপন্ন করে বিরোধী ভোট ভাগ করাই এখানে মমতার কৌশল।