1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরিব দেশে বউ খোঁজা

৯ জুলাই ২০১০

নিজের দেশে বউ মেলে না৷ তাই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই ছুটছেন তুলনামূলক অনুন্নত প্রতিবেশী দেশগুলোতে৷ এই ধরনের বিয়ে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি, এর মধ্য দিয়ে মানবপাচারও হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/OEko
ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মেয়েদের বিয়ে করছেন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেরাছবি: AP

বিংশ শতক গড়িয়ে এখন একুশ শতক৷ কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে নারীরা৷ উন্নত বিশ্বে তো সেটা আরো বেশি৷ আর এর মধ্যে বিয়ে নামের পুরনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানে জড়াতে স্বনির্ভর অনেক নারী এখন আর চাইছেন না৷ বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে৷ তাই ওই দেশ দুটির অনেক পুরুষ এখন হন্যে হয়েও পাত্রী খুঁজে না পেয়ে মুখ ঘুরিয়েছেন ফিলিপিন্স আর ভিয়েতনামের মতো তুলনামূলক কম উন্নত দেশে৷

১৯৯৫ থেকে ২০০৬ সাল- জাপানে এই সময়ে পুরুষদের বিদেশি বিয়ে বেড়েছে ৭৩ শতাংশ৷ এটা সরকারি হিসাব৷ জাপানিরা সবচেয়ে বেশি বউ পেয়েছে ফিলিপিন্স থেকে৷ এরপরই রয়েছে চীনা বউ৷ এই রকম অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়ায়ও৷ ২০০৯ সালে সে দেশে যেসব মৎস্যজীবী এবং কৃষক বিয়ে করেছে, তাদের ৩৫ শতাংশেরই বউ বিদেশি৷ এসব পাত্রীর অধিকাংশ এসেছে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে৷ ওসাকার রয়্যাল নামে একটি ডেটিং এজেন্সির কর্ণধার তোশিও এসাকা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা এখন একা থাকতেই পছন্দ করছে৷ ফলে দেখা দিয়েছে পাত্রী সঙ্কট৷ আর তাই অন্য দেশে বউ খুঁজছে জাপানিরা৷

জাপান আর কোরিয়ার মতো চিত্র দেখা যায় সিঙ্গাপুরেও৷ সেখানে পাত্রী আসছে হংকং আর তাইওয়ান থেকে৷ পুরুষরা না হয় পাত্রী খুঁজে পাচ্ছে না নিজ দেশে, কিন্তু নারীরা বিদেশি স্বামী বেছে নিচ্ছে কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর আর কিছু নয়, অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ্য৷ একটু ভালো থাকার আশায় অনেক নারী বিদেশি বিয়ে করে পাড়ি দিচ্ছে অচেনা দেশে৷ আর এর সুযোগে পাচারের ঘটনাও যে ঘটে না, তা নয়৷ এই বিষয়ে কম্বোডিয়ার মানবাধিকারকর্মী ইয়া নাবুথ বললেন, ‘‘পরিবারে অভাব-অনটন, এর হাতে থেকে বাঁচতে এবং পরিবারের অন্যদের বাঁচাতেই বিদেশিদের বিয়ে করতে চায় মেয়েরা৷ তবে কারো ভাগ্য ভালো হয়, কেউ আবার প্রতারিত হয়৷'' হংকংয়ের ফার্মি কং বলেন, যাদের বিয়ে করে আনা হয় তাদের অনেকে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়৷ অন্যভাষা বিশেষ করে ইংরজি না জানায় তারা সমস্যাগুলো কাউকে বোঝাতেও পারে না৷ অচেনা পরিবেশে অসহায় হয়ে পড়ে তারা৷

বিয়ের নামে প্রতারণা ঠেকাতে বিশেষ বন্দোবস্ত করছে ইন্দোনেশিয়া৷ সে দেশের কোনো নারীকে বিয়ে করতে হলে বিদেশি পাত্রকে ৫৫ হাজার ডলার বন্ধক রাখতে হবে- এমন আইন করার কথা ভাবছে তারা৷ যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তবে স্ত্রী ওই অর্থ পাবে৷

বিয়ের আড়ালে পাচার এড়াতে নতুন করে আইন করছে কম্বোডিয়াও৷ আর নতুন ব্যবস্থা চালুর আগে দক্ষিণ কোরীয়দের সঙ্গে সে দেশের কারো বিয়ে কিছুকালের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ দুই বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়াও ম্যারেজ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর খড়গহস্ত হয়েছিলো, কারণ ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নাকি ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশিদের বিয়ে করতে তরুণীদের প্রলুব্ধ করে আসছিলো৷ এখন ঘটনাটি উল্টো৷ দক্ষিণ কোরীয়রাই এখন বিয়ে করতে যাচ্ছে৷ একই কারণে তাইওয়ান এখন সে দেশে বিদেশি ম্যারেজ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে৷

আশপাশের দেশগুলোর পুরুষদের এতোদিন নজর ছিলো চীনের তরুণীদের দিকে৷ কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ওই দেশটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করায় মেয়েদের সংখ্যা কমে আসছে৷ তবে সমস্যাপীড়িত উত্তর কোরিয়া থেকে আবার অনেক তরুণী ছুটে যাচ্ছে চীনে৷ এভাবেই বদলাচ্ছে পাত্রীদের বাজার৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ