1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির অর্থ যেভাবে সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধে ব্যবহার হচ্ছে

২৯ মার্চ ২০২৪

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা জার্মানির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চাইলে তাদের কাছে সিরিয়ার পাসপোর্ট চাওয়া হচ্ছে৷ এই পাসপোর্ট দেওয়ার বিনিময়ে সিরীয় সরকার বছরে অনেক অর্থ পাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4eFZC
একটি সিরিয়ান পাসপোর্টের ছবি
জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া সিরীয়রা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চাইলে তাদের কাছে সিরিয়ার পাসপোর্ট চাওয়া হচ্ছেছবি: Jens Wolf/dpa/picture alliance

অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, এই অর্থ এমন এক সরকারের কাজে লাগছে যে সরকারের উপর জার্মানির নিষেধাজ্ঞা আছে

জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরে থাকেন ২৭ বছর বয়সি আদম ইয়াসমিন৷ ২০১১ সালে সিরিয়ায় গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ শুরু হলে ইয়াসমিন তার শহর জাবলেহতে স্কুলের পর বিক্ষোভের আয়োজন করতেন৷ এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে সাত মাস জেল খেটেছেন৷ ‘‘ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল,'' ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি৷ এরপর ছাড়া পেয়ে জার্মানি পালিয়ে আসেন ইয়াসমিন৷

বছরখানেক আগে জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে তার কাছে সিরিয়ার পাসপোর্ট চাওয়া হয়৷ ইয়াসমিন বলেন, কর্তৃপক্ষকে তিনি তার পুরনো সিরীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছেন৷ ‘‘কিন্তু ওগুলো যথেষ্ট ছিল না৷ তারা আমাকে বলেছে, যে আমাকে পাসপোর্ট দিতে হবে৷ আমি সেটা দিতে অস্বীকার করেছি৷ আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে তারপর আমি আর কোনোভাবেই সিরীয় সরকারকে কোনো অর্থ দিতে চাই না৷ এটা আমার জন্য রেড লাইন,'' বলেন ইয়াসমিন৷

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জার্মানিতে যারা শরণার্থী হিসেবে আছেন তারা যে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন তাদের আবার সেই দেশের দূতাবাসে যেতে বাধ্য করা যায় না৷

তাই ইয়াসমিন এখন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন৷

ইয়াসমিন একা নন৷ জার্মানিতে যেসব সিরিয়ান ‘সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন' নিয়ে আছেন তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে৷ সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন হচ্ছে শরণার্থীর নিচের স্তর৷ গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির কারণে যারা বিপদে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় দেশ ছাড়েন তাদের সাধারণত সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন দেওয়া হয়৷ আর কোনো ব্যক্তির জীবনের উপর যদি প্রত্যক্ষ হুমকি থাকে তাহলে তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়৷

জার্মানিতে বাস করা নয় লাখের বেশি সিরীয়র বেশিরভাগ (প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার জন) জার্মানিতে বসবাসের অস্থায়ী অনুমতি নিয়ে আছেন৷ এদের বেশিরভাগই সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন নিয়ে বাস করছেন৷

জার্মানির আমলাতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী তাদের সবার সিরিয়ার সরকারের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে৷

জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, যে সিরীয়রা সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন নিয়ে আছেন তাদের উপর সিরীয় সরকারের কাছ থেকে সরাসরি হুমকি নেই৷ তাই সিরিয়ার পাসপোর্ট নেওয়াটা তাদের জন্য ‘যুক্তিসঙ্গত'৷

বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল পাসপোর্ট হচ্ছে সিরিয়ার পাসপোর্ট৷ জার্মানিতে সিরিয়ার দূতাবাস থেকে একটি নতুন পাসপোর্ট পেতে ২৬৫ থেকে এক হাজার ইউরো খরচ হয়৷ এর মেয়াদ থাকে মাত্র দুই বছর৷ আর জার্মানরা প্রায় ১০০ ইউরো খরচ করে ১০ বছর মেয়াদি নতুন পাসপোর্ট পেতে পারেন৷

জার্মানিতে শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো ২০২২ সালে #DefundAssad নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল৷ তাদের হিসেব বলছে, পাসপোর্ট নিয়ে জার্মানির কঠোর নীতির কারণে প্রতিবছর সিরিয়ার সরকার হয়ত ৮৫ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত পেয়ে থাকে৷

তবে সিরিয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ের বিশ্লেষক কারাম শার বিস্তারিত তদন্ত করে বলছেন, জার্মানিতে থাকা সিরীয়দের কাছ থেকে সিরিয়ার সরকার বছরে ১৪ থেকে ৩৭ মিলিয়ন ইউরো পেয়ে থাকে৷

২০১৮ সালের আগে বার্লিনসহ জার্মানির কয়েকটি রাজ্য মনে করত সিরীয়দের নতুন পাসপোর্ট নিতে বলাটা ‘অযৌক্তিক'৷ বাভারিয়াসহ বাকি রাজ্যগুলোতে সিরীয়দের নতুন পাসপোর্ট নেওয়ার নিয়ম ছিল৷

২০১৮ সালে জার্মানির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট জেহফার সব রাজ্যের জন্য একই নিয়ম চালুর কথা বলে সব রাজ্যকে বাভারিয়ার নিয়ম মানার নির্দেশ দেন৷

#DefundAssad ক্যাম্পেইনের একজন মারিসা রাইজা মনে করেন জেহফারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনীতি আছে৷ ‘‘যুক্তি হিসেবে তারা একই নিয়ম চালুর কথা বলেছেন৷ কিন্তু তারাতো অন্য নিয়মটাও নিতে পারতেন,'' বলেন তিনি৷

রাইজা বলেন, জার্মানিতে থাকা আফগানদের নতুন পাসপোর্টের জন্য দূতাবাসে যেতে হয় না৷

ইইউর যে ছয় দেশে সিরীয়রা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছেন সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে ডিডাব্লিউ দেখেছে, জার্মানির নিয়মটিই সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন৷

ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে বাস করার সিরীয়রা, শরণার্থী বা সাবসিডিয়ার প্রোটেকশন, যে হিসেবেই থাকুন না কেন তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করতে বাধ্য করা হয় না বলে ঐ দুই দেশে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, কান্ট্রি অফ অরিজিনের দূতাবাসে যাওয়াটা যদি যুক্তিসঙ্গত মনে না হয় তাহলে জার্মান কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টের বদলে বিভিন্ন নথি বিবেচনা করতে পারে৷ কিন্তু ‘একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সব কারণ ও বিশেষ পরিস্থিতির পক্ষে কট্টর প্রমাণ দেখাতে হবে৷'

২০২৩ সালে রাজ্যগুলোকে এ বিষয়গুলো ‘বিশেষ সতর্কতার' সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে৷

কিন্তু সিরীয় ও ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, বাস্তবে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হওয়ার উদাহরণ খুব বিরল৷
 

ফ্রাইবুর্গের ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আমরা এখানে ইন্টিগ্রেট হওয়ার আশা করছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের পথে পাথর বিছিয়ে রাখছে৷'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের এমন এক সরকারকে ১০০০ ইউরো দিতে বলছে যারা নিজ দেশ থেকে আমাদের বের করে দিয়েছে, নির্যাতন করেছে এবং আমাদের পরিবারকে হত্যা করেছে, এবং তারপর তারা বলছে ‘এটা আমাদের সমস্যা নয়, এটা আপনার সমস্যা৷' এটা অগ্রহণযোগ্য এবং অসহনীয় এবং এভাবে চলা উচিত নয়৷''

ক্যাথরিন শায়ের/জেডএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য