1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরমাণু শক্তি

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২

১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয়ের পর পোলিশ সরকার উত্তর পোল্যান্ডে একটি আধা-নির্মিত আণবিক চুল্লি প্রকল্প বাতিল করেন৷ এখন আবার কয়লার উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য আণবিক শক্তির কথা ভাবা হচ্ছে৷ তবে সকলে তা’তে সুখী নন৷

https://p.dw.com/p/168mB
ছবি: DW

পোল্যান্ডের ৯০ শতাংশ জ্বালানি শক্তি আসে কয়লা থেকে৷ অথচ কয়লা থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়৷ কাজেই চেরনোবিলের বিশ বছর পরে পোলিশ সরকার আবার আণবিক শক্তির কথা ভাবছেন৷ বালটিক সাগরের উপকূলে তিনটি আণবিক চুল্লি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ কিন্তু চেরনোবিলের বিভীষিকা যে সকলেই একেবারে ভুলে গেছে, এমন নয়৷

যেমন বালটিক এলাকার বাসিন্দা টাওটেউজ পাস্তুনিয়াক৷ বিশ বছর আগে যেদিন সারা পূর্ব ইউরোপের আকাশ থেকে হলুদ বিষ ঝরতে শুরু করে, সেদিনটা তাঁর খুব ভালোই মনে আছে৷ পাস্তুনিয়াক সেদিন তাঁর ছোট্ট বাগানটায় কাজ করছিলেন:

‘‘বাগানে কাজ করতে করতে ভাবছিলাম, বাগানের মাটিতে এ'ধরণের হলুদ ধুলো এলো কোথা থেকে? পাঁচ দিন পরে খবর পেলাম, চেরনোবিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে৷''

ঐ পাঁচ দিনেই চেরনোবিল থেকে তেজস্ক্রিয়তা দূষিত বৃষ্টি ইউক্রেইন থেকে উত্তর পোল্যান্ডের ডানজিগ হয়ে টাওটেউজ পাস্তুনিয়াকের রক্তে ঢুকে গেছে৷ তার রক্তের শ্বেতকণিকাগুলোকে যথেচ্ছ ধ্বংস করেছে৷ তার রোগ সামলানোর ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে৷ কাজেই আজ প্রতি শীতে পাস্তুনিয়াক ভয়ে ভয়ে থাকেন: একবার ঠাণ্ডা লাগলে যেন আর সারতেই চায় না৷

পাস্তুনিয়াক আদতে নৌবাহিনির অফিসার, বয়স এখন পঞ্চাশোর্ধে৷ বছর পনেরো আগে উত্তর পোল্যান্ডের ছোট্ট, নিরিবিলি শহর কোপালিনোতে বাসা গাড়েন৷ ছোট্ট একটি বাড়ি তৈরি করে একটি ছোটখাটো পর্যটন সংস্থা গড়ে তোলেন৷ কিন্তু এখন সেই পারমাণবিক দুঃস্বপ্ন যেন আবার ফিরে আসতে চলেছে৷ গত নভেম্বরে সরকারের তরফ থেকে কোপালিনোর বাসিন্দাদের জানানো হয় যে, পোলিশ সরকার কোপালিনোর কাছে সংরক্ষিত অরণ্য এলাকাকে তিনটি পরিকল্পিত আণবিক চুল্লির একটির সাইট হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রাথমিক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হবে৷

Polen Überreste vom Atomkraftwerk in Zarnowiec
জারনোভিয়েচে পোল্যান্ডের অসমাপ্ত, পরিত্যক্ত আণবিক চুল্লিছবি: picture-alliance/dpa

সংরক্ষিত এলাকাটি তার উঁচু উঁচু বালিয়াড়ির জন্য জার্মান এবং পোলিশ পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়৷ ওদিকে পাস্তুনিয়াকের বাড়িটি ঐ মনোরম প্রকৃতি থেকে পায়ে হাঁটার দূরত্বে৷ সংরক্ষিত এলাকায় আণবিক চুল্লি বানানোর মানে প্রথমেই গাছ কাটতে হবে৷ আণবিক চুল্লি ঠাণ্ডা রাখার জল তোলার জন্য বালিয়াড়ির ওপাশে বালটিক সাগর তো রয়েছেই৷

সংরক্ষিত এলাকার কাছেই একটি আধুনিক বাংলো বাড়ি৷ তার গেটের উপর একটি কঙ্কালের মাথা দেওয়া একটি সাইন৷ সাইনের গায়ে লেখা: ‘নিয়ে দ্লা আটমু', অর্থাৎ ‘আণবিক শক্তি চলবে না'৷ বাড়িটি এক ইঞ্জিনিয়ারের৷ ইঞ্জিনিয়ারটি স্বয়ং আণবিক চুল্লির বিরোধী হলেও, স্ত্রী তাঁকে বলে দিয়েছেন, প্রকাশ্যে তা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করতে৷ তাই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক৷ তবে খোলাখুলি বললেন:

‘‘আমি এখানেই থাকি৷ আমার স্বাস্থ্য বিমাকে জিগ্যেস করেছিলাম, কোনো বিশেষ বিমা নেওয়া যাবে কিনা৷ তাদের উত্তর: আমরা তোমাকে কোনো বিমা দেব না, কেননা কিছু ঘটলে তা চোকাতে পারব না৷''

ইঞ্জিনিয়ার লোকটি দশ বছর একটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন৷ তিনি স্বীকার করলেন, এ'ধরণের অনুন্নত এলাকা, যেখানে মানুষজন পর্যটনের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল, সেখানে আণবিক চুল্লির কল্যাণে কিছু নতুন চাকরির সম্ভাবনা লোভনীয় বৈকি৷ অপরদিকে অনেকের ভয় আছে যে, আণবিক চুল্লি তৈরি হলে তাদের জমির দাম পড়ে যাবে৷ বহু লোককে তাদের নিজেদের জমিতে কনস্ট্রাকশনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ অনেকের ভয়, তাদের জমি নিয়ে নেওয়া হবে, কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না৷ পাস্তুনিয়াকের ভয়টা একটু অন্যরকম:

‘‘বিশ-ত্রিশ বছর ধরে আণবিক চুল্লিটা তৈরি হওয়ার পরে এখানে কিছুই থাকবে না, পর্যটন তো নয়ই৷ এ'সব হারানোর জন্য এখানকার মানুষ কি কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে? কিছুই নয়৷''

অপরদিকে পোলিশ সরকারের বক্তব্য হল: কয়লার উপর নির্ভরতা কমানো হবে; স্থানীয় মানুষ চাকরি পাবে; বালটিকে ফুকুশিমার মতো সুনামি হবার সম্ভাবনা নেই; ইউরোপ জুড়ে তো কতো আণবিক চুল্লি কাজ করছে, ইত্যাদি৷

আর পাস্তুনিয়াক বিনিদ্র রজনীতে ভাবছেন বিশ বছর আগের সেই হলুদ বৃষ্টির কথা৷

প্রতিবেদন: নাওমি কনরাড/এসি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য