1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেশি মাংস

কার্লা ব্লাইকার/এসি২১ ডিসেম্বর ২০১২

আমিষ না নিরামিষ, সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, মাংসে পুষ্টি আছে৷ পরিমিত মাংস খেলে শরীরের উপকারই হয়৷ কিন্তু বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মাংস খাওয়ার প্রবণতা৷ এর ফলে পরোক্ষভাবে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/177JQ
জার্মানরা আবার একটু বেশিই মাংস খায়৷ জার্মান পুরুষরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক কিলো দু'শো গ্রাম মাংস খান, মহিলারা তার অর্ধেক৷
ছবি: dapd

কাটলেট থেকে শুরু করে সসেজ কি হ্যাম, ইউরোপের মানুষ সানন্দে মাংস খেয়ে থাকে৷ জার্মানরা আবার একটু বেশিই মাংস খায়৷ জার্মান পুরুষরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক কিলো দু'শো গ্রাম মাংস খান, মহিলারা তার অর্ধেক৷

জার্মানরা একা নন, সারা বিশ্ব জুড়েই মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ গত ৫০ বছরে মাংস খাওয়ার পরিমাণ চারগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বিশ্ব কৃষি বিবরণ অনুযায়ী, বর্তমানে বছরে ২৮ কোটি টনের বেশি মাংস খাওয়া হয়৷ তার একটি ফলশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন জার্মান সবুজ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর গ্রাহক সংক্রান্ত বিষয়াবলীর মুখপাত্র নিকোল মাইশ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কাজেই উর্বর কৃষিজমির চাহিদা বাড়ছে৷ যেহেতু বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং তাদের সকলেই গড়ে আরো বেশি করে খাদ্য গ্রহণ করছে, সেই সঙ্গে আরো বেশি করে মাংস খাচ্ছে – সেহেতু উর্বর চাষের জমির অভাব দেখা দিয়েছে৷ বলা চলে, পশুর খাবার আর মানুষের খাবারের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে৷ বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে পশুর খাবার হিসেবে৷ আর তা বেড়ে চলেছে, কেননা চীনের মতো উত্থানশীল দেশগুলিতে আরো বেশি করে মাংস খাওয়া হচ্ছে৷''

Milchkuh / Kühe / Rind / Rinder
বিশ্ব কৃষি বিবরণ অনুযায়ী, বর্তমানে বছরে ২৮ কোটি টনের বেশি মাংস খাওয়া হয়ছবি: dapd

এর পরে আসে পানির সমস্যা৷ এক কিলোগ্রাম মাংস উৎপাদন করতে প্রায় ৪০ হাজার লিটার পানি লাগে, জানালেন মাইশ৷ ওদিকে ইউনিসেফ-এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষের পর্যাপ্ত পানীয় জলের সংস্থান নেই৷ তৃতীয়ত আসছে গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস ইত্যাদি৷ মাইশ জানালেন, ‘‘বলা চলে, বিশ্ব জুড়ে পশুপালনের ফলে তথাকথিত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ১৮ শতাংশ নির্গত হচ্ছে৷ এর অর্থ: আমরা যদি জলবায়ু সুরক্ষা সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে চাই, তবে মাংস খাওয়া না কমিয়ে উপায় নেই৷ সেক্ষেত্রে শিল্পেন্নত দেশগুলিকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে৷ কেননা, চীন কি ভারতেও মাংস খাওয়া বাড়ছে, কিন্তু এখানকার তুলনায় তা অনেক, অনেক কম৷''

জলবায়ুর হন্তারক গ্যাসের ১৮ শতাংশ আসে নিরীহ গবাদি পশু থেকে! যা কিনা গাড়িঘোড়া-যানবাহন থেকে যে পরিমাণ গ্যাস বেরোয়, তার চেয়েও বেশি! অপরদিকে মাংস খাওয়ার উপকারিতার দিকটাও চিন্তা করতে হবে৷ জার্মান গেজেলশাফ্ট ফ্যুর এর্নেহেরুং বা পুষ্টি সংক্রান্ত গবেষণা সমিতির আন্টিয়ে গাল বলেন, ‘‘মাংস খাওয়ার অনেক সুবিধা আছে, কেননা মাংস থেকে অনেক পুষ্টিকর পদার্থ পাওয়া যায়, যেমন প্রোটিন কিংবা আয়রন কিংবা নানা ধরণের ভিটামিন ‘বি'৷ শরীরের জন্য সেগুলো প্রয়োজনীয়৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মাংস খাওয়াটা বুনিয়াদিভাবে খারাপ নয়৷ আমরা সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি৷''

সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম মাংস? সাধারণ জার্মানরা, বিশেষ করে পুরুষরা, তার অনেক বেশি খেয়ে থাকেন৷ এবং তথাকথিত লাল মাংস – অর্থাৎ, মুর্গি জাতীয় সাদা মাংস নয় – এমন মাংস বেশি খেলে ক্যানসার হবার ঝুঁকি বাড়ে৷ অবশ্য এ তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে৷

Fleischkonsum
মাঝেমধ্যে নিরামিষ খেলেই বা মন্দ কি?ছবি: DW/C.Bleiker

তাহলে কি সকলকেই নিরামিষাশী হতে হবে? না, তবে মাঝেমধ্যে নিরামিষ খেলেই বা মন্দ কি? ঠিক সেটাকেই নীতি করে ২৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় বন শহরের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের কাছে নিরামিষ রেস্তরাঁ ‘কাসিয়ুস গার্টেন'৷ তিন তলা রেস্তরাঁটির ৮০ শতাংশ খদ্দের হলেন বস্তুত আমিষভোজী৷ কিন্তু তাঁরা কাসিয়ুস গার্টেনে আসেন এখানকার উচ্চমানের, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভিলাষে৷ এবং বৈচিত্র্যেরও কোনো অভাব নেই: যেমন ৬০ ধরণের স্যালাড৷

গবাদি পশুপালন থেকে যে কাহিনির শুরু, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সরকারি ভরতুকি, কোটা, অহেতুকী মাখনের পাহাড় এবং অপ্রয়োজনীয় দুধের সায়রের এক প্রহসনে পরিণত হয়েছে৷ বলতে কি, মানুষে কি খায় বা না খায়, তা'ও যে এক ধরণের সিদ্ধান্ত, তা'ও যে পরিবেশের ক্ষতিবৃদ্ধি করতে পারে, এই ধারণাটাই এখনো ইউরোপের মানুষদের মাথাতে ঢোকেনি৷ কাজেই চীন কিংবা ভারতের মানুষদের ক্ষেত্রে – যুক্তির আগে প্রযুক্তির মতো – সে কথাটা যে আরো অনেক পরে বাস্তব হয়ে উঠবে, তা'তে আশ্চর্য কি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য