1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সব অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ ডিসেম্বর ২০১৮

ফেসবুক বা টুইটারে যে-ই অপপ্রচার করুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই সরকারের৷ ডয়চে ভেলেকে এ কথা জানিয়েছেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷

https://p.dw.com/p/3AVHz
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei

তিনি বলেছেন, ‘‘সরকারি কোনো কর্মকর্তাও যদি এই ধরনের কাজ করেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷ অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অবশ্যই আমাদের সমর্থন থাকবে৷''

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে–এমন অভিযোগ করেছে খোদ টুইটার ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ১৫টি টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ৬টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ৯টি ফেসবুক পেজও বন্ধ করা হয়েছে একই অভিযোগে৷ টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তদন্ত শুরু করেছে, পরে বিস্তারিত রিপোর্ট জানানো হবে৷

‘অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমাদের সমর্থন থাকবে’

টুইটারের টুইটে বলা হয়েছে, যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে সেগুলোতে ৫০টিরও কম ফলোয়ার বা অনুসারী ছিল,যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম৷ বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত করা হচ্ছে৷ তদন্ত শেষ হলে অ্যাকাউন্টগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে টুইটার৷ টুইটে আরো বলা হয়েছে, আমাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যে অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে৷ তবে বিস্তারিত কিছু তারা বলেনি৷

বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেসবুক বা টুইটার কর্তৃপক্ষ কী জানালো আর জানালো না, সেটার দিকে আমাদের তাকিয়ে না থেকে নিজেদের তদন্ত শুরু করা উচিত৷ সরকারের কেউ যদি এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আমি এখনো মনে করি না, সরকার এর সঙ্গে জড়িত৷ হয়ত কেউ কেউ জড়িত হতে পারে৷ সামনে নির্বাচন, তাই সরকারের উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করা৷ এ নিয়ে এখনই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে৷'' 

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটারের অ্যাকাউন্ট বন্ধের সঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত কেউ যুক্ত থাকতে পারে৷ তবে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করে বলা হয়নি৷

‘জনগণকে অবহিত করা বিটিআরসির কাজ’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি৷ প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি৷ আমার একজন কমিশনার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন৷ আসলে বড়দিন উপলক্ষে ফেসবুক বা টুইটার অফিস একেবারেই বন্ধ৷ সিঙ্গাপুর ও অ্যামেরিকা অফিসে যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায় না৷ তারা বড়দিনে ১৫ দিনের ছুটি কাটায়৷ ফলে তারা আমাদের মেগুলোর খুব একটা জবাবও দিচ্ছে না৷ তারপরও আমাদের একজন কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন৷''

ফেসবুকের পক্ষ থেকেও যে ৯টি পাতা ও ৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল৷ ফেসবুক জানিয়েছে, বন্ধ হওয়া পেজগুলোর মধ্যে একটির ফলোয়ার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯০০ জন৷ বন্ধ হওয়া পেজগুলো বুস্ট করতে ৮০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে৷ এখানে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রথম বুস্ট করা হয়৷ আর সর্বশেষ বুস্ট করা হয়েছে গত নভেম্বর মাসে৷

বন্ধ হওয়া পেজগুলোর মধ্যে আছে  বিডিএসনিউজ ২৪ ডটকম, বিবিসি-বাংলা নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, নিউজ দিনেররাত ২৪ ডটকম৷ তবে কোন ছয়টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করা হয়েছে সেই তথ্য প্রকাশ করেনি ফেসবুক৷

‘সরকারের কেউ যদি এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে’

এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের কাছে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট-সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়া হলে তাতে সাড়া দেয়নি টুইটার কর্তৃপক্ষ৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে ওই অ্যাকাউন্ট-সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয় বলে টুইটারের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে বলা হয়৷ অনলাইনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে কোনো দেশের সরকারের তরফে টুইটারকে কী ধরনের অনুরোধ করা হয়, সেই তথ্য থাকে৷ তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের কথা তারা বলেনি৷

বাংলাদেশে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচার মনিটরিংয়ের জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে৷ এই সেলটির সার্বিক তদারকি করছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম৷ টুইটার বা ফেসবুকের এই আইডিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তারানা হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আসলে রাজনৈতিক বিষয় দেখি না৷ আমরা সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার হয়, সেগুলোর ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করি৷ যেমন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হারিয়ে গেছে– এমন একটি অপপ্রচার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ সেটার বিষয়ে আমরা ব্রিফিং করে নিশ্চিত করেছি, আমাদের স্যাটেলাইট ঠিকভাবেই আছে, সেটা কাজ করছে৷ আমাদের বিটিভি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে কাজ করছে৷ আমরা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কথোপকথনের বিষয়ে বা কে কার বিরুদ্ধে বলল, সেটার কোনো খোঁজ রাখি না৷ বা এই ধরনের খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যবস্থাও আমাদের নেই৷ এটা বিটিআরসির কাজ৷'' 

এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব৷ র‌্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে ওয়াহিদুন্নবী (৪৭), আরাফাত তারুণ্য তামাদি (৩৭) ও আব্দুল্লাহ জাবিদ (৪৫) নামে ওই তিনজনকে আটক করা হয়৷ র‌্যাব কর্মকর্তা ফারুকী বলেন, ‘‘আটকরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক অপপ্রচার, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়ে আসছিল৷ তারা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে৷''

এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷