‘‘আমি বাবাকে ভালবাসি, মাকে ভালবাসি''
২৬ ডিসেম্বর ২০১১ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে জন্ম আলিয়া হোমায়রা'র৷ একটি হলুদ কাগজে সে লিখেছে, ‘‘আমি বাবাকে ভালবাসি, মাকে ভালবাসি, ভাই কিকিকে ভালবাসি, বোন ইচাকে ভালবাসি৷'' আলিয়ার এখন আট বছয় বয়স৷ অর্থাৎ সুনামি যাখন তার পরিবারের সবাইকে কেড়ে নিয়েছিল, তখন আলিয়ার বয়স ছিল মাত্র এক বছর৷
আলিয়াসহ আরো অনেক বাচ্চা মিলে সুনামি-র সাত বছর পালন করছে৷ সবাই একটি কাগজে ছোট করে তার পরিবারের উদ্দেশ্যে কিছু লিখেছে৷ ভালবাসার কথা, প্রিয়জনকে হারানোর কথা৷ প্রায় পাঁচ হাজার কাগজের ফুলের ওপর এসব লেখা হয়েছে৷ এই হলুদ রঙের কাগজের ফুলগুলো এসেছে জাপানের ‘কোবে' শহর থেকে৷ ১৬ বছর আগে কোবে শহরে আঘাত হেনেছিল ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প৷ প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে৷ তবে যারা সেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল, তাদেরই একজন লিখেছে, ‘‘চলো সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়াই৷ সবাই সামনে এগিয়ে চলি৷''
আলিয়ার দেখাশোনা করে তার নানি৷ প্রতি বছর তারা আচেহ প্রদেশে আসে৷ মৃতদের স্মরাণ করতে ৷ কাঁদতে কাঁদতে আলিয়ার নানি জানান, ‘‘আমি এখানে আলিয়াকে নিয়ে আসি যাতে করে ও বাবা-মাকে ভুলে না যায়৷''
শুধু আলিয়া নয়, আরো প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে আচেহ শহরে৷ সবাই স্মরণ করছে তাদের প্রিয়জনদের, যাদের কেড়ে নিয়েছিল ২০০৪ সালের ভয়ঙ্কর সেই সুনামি৷ আত্মীয় স্বজনরা দাঁড়িয়েছে কবরের সামনে৷ এমন অসংখ্য গণকবর খোঁড়া হয়েছিল সুনামি'র পরপরই৷ সিরনের একটি গণকবরে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমানকে একসঙ্গে কবর দেয়া হয়েছিল৷ ধর্ম তখন কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি৷ তবে অনেক মুসলমান জড়ো হয়েছিল মসজিদে৷ মৃতদের রূহের মাগফেরাত কামনা করতে৷
সুনামি'র সাত বছর পালনের কয়েকদিন আগে আচেহ'এর একটি মেয়ে তার বাবা-মাকে খুঁজে পেয়েছে৷ মেরি ইয়োলান্ডার ওয়াতির বয়স যখন সাত বছর তখন সুনামি'এর আঘাতে সে হারিয়ে যায় তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে৷ তার বাবা-মা ধরে নিয়েছিল ওয়াতি মারা গেছে৷ কিন্তু হারিয়ে যাওয়া ওয়াতি এতোদিন ছিল আর এক মহিলার কাছে৷ সে ওয়াতি'কে দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষেও করাতো৷ এমনকি পরে সে ওয়াতি'কে বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়৷ ওয়াতি হাঁটতে হাঁটতে আচেহ শহরে এসে পৌঁছায়৷ তখন ওয়াতি'কে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের মোড়লের দপ্তরে৷ ওয়াতি শুধু তার নানার নাম জানতো৷ ভদ্রলোকের নাম ইব্রাহিম৷ ইব্রাহিমকে খবর দেয়া হয়৷ সে এসে সনাক্ত করেন ওয়াতি'কে৷ জানান, ওয়াতি তাঁর হারিয়ে যাওয়া নাতনি৷ সাত বছর পর, অবশেষে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসে ওয়াতি৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ