1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের নড়ানো সহজ নয়

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

সতেরো বছর আগেই তিনি নেমেছিলেন যু্দ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দাবিতে৷ দাবির ভাষা ছিল গান৷ জামায়াত-শিবিরের রোষানলে পড়েছিলেন মাকসুদ৷ প্রজন্ম চত্বর এতদিনে সেই গানের দাবিকে সার্থক করছে৷

https://p.dw.com/p/17hLE
ছবি: DW/H. Swapan

নিজের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলেন তিনি৷ সে দাবিও তুলেছিলেন গানে গানে৷ গানের শুরুটাই ছিল নাড়িয়ে দেয়ার মতো,

‘‘ ইতিহাসের একটা সময় ছিল যখন বাঙালি ছিল একটি জাতি

আজ বাঙ্গালী নেহায়েত রাজনৈতিক একটা উপাধি

আর বাঙালি আনন্দ উত্‍সবের মাস ফেব্রুয়ারি৷

ভিন্ন রাজাকারের পোস্টার-স্টিকার আর ধিক্কার

সবই শোভা পায় এই একুশের আনন্দ মেলায়৷''

সেই গানে আরো ছিল দু লক্ষ মা-বোনের কথা; যাঁরা এখনো পাকিস্তানে, তাঁদের সম্পর্কে মাকসুদ লিখেছিলেন, ‘‘ ৭১ এর ঘাতকের সন্তানেরা আজো নির্মম ধর্ষণ চালায় পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে৷'' প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘‘কোথায় তোমরা নারীবাদী পক্ষ? কোথায় তুমি তসলিমা? কোথায় আমার দুই দেশী নেত্রী খালেদা আর হাসিনা ?'' কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি৷ শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া অনেক ব্যাপারেই এখনো দুই মেরুতে৷ তবে বাংলাদেশ আর তাঁদের অনুসরণ করে সব প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত নয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ‘উঁচু মহল' থেকে যে যা-ই বলুন, সাধারণ মানুষ কিন্তু দৃশ্যমানভাবেই ঐক্যবদ্ধ৷ কৃতিত্ব তরুণ প্রজন্মের, কৃতিত্ব প্রজন্ম চত্বরের৷ তাঁদের কৃতিত্বে মাকসুদও খুশি, প্রজন্ম চত্বরে নিয়মিত দেখা যায় ঢাকা ব্যান্ডের এই গর্বিত ভোকালিস্টকে৷

প্রজন্ম চত্বর: মাকসুদের স্বপ্নপূরণ

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সবাই এখন সোচ্চার- এটা তো আনন্দেরই, তবে মাকসুদের সব চেয়ে বড় আনন্দটা স্বপ্ন পূরণের৷ এমন একটি দিনের স্বপ্নই তো দেখে এসেছেন এতকাল৷ আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে রাজনীতির কূটক্যাচাল৷ হতাশায় চেয়েছেন নিজের মৃত্যুদণ্ড৷ গান নিষিদ্ধ হয়েছে, বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে৷ একটা মহল থেকে মৃত্যুপরোয়ানাও এসেছিল৷ তার কারণও গান৷ ৯৭ সালে ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ' অ্যালবামটি খুব সাড়া জাগিয়েছিল৷ অ্যালবামের একটি গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাকসুদ জানালেন, জামায়াত-শিবিরের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল সেই গান৷ ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ' নামের ক্যাসেটটি প্রথম দিনেই বিক্রি হয়ে যায় সত্তর হাজার কপি৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তখন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঘাঁটি৷ সেখানে টানা দুদিন লাউড স্পিকারে বাজানো হয়েছিল সেই গানটি৷ পরে কনসার্ট করতে সেখানে গিয়েছিল ঢাকা ব্যান্ড৷ শিবির কনসার্ট হতে দেয়নি৷ মাকসুদ জানালেন, তখন নাকি তাঁকে কাফনের কাপড়ও পাঠানো হয়েছিল৷

তা সতেরো বছর আগের সেই গানে এমন কি ছিল যা জামায়াত-শিবিরকে এতটা খেপিয়ে দিলো? পড়েই জানুন :

‘‘কোন পথে ওরা চলছে হায় পরোয়ারদিগার

যে হাতে তাদের কোরান শরীফ সেই হাতে কেন তলোয়ার ?

নারায়ে তাকবির আল্লাহুআকবার বলে দিচ্ছে জিহাদের ডাক

হত্যা করছে ওরা মানবজাতি তোমার আশরাফুল মাখলুকাত৷

কোন পথে চলছি আমরা হায় পরোয়ারদিগার

বাড়িতে বাড়িতে আছে কোরান শরীফ তবে নেই তার কোনো তেলাওয়াত৷

আল্লাহর আইন কায়েম হোক ওরা তুলছে দাবি প্রতিদিন

লাকুমদিনিকুম ওলিয়াদিন আমার লাকুমদিনিকুম ওলিয়াদিন৷

প্রতিদিন বৈষম্য আর বিদ্বেষ দেশ জুড়ে

প্রতি ওয়াক্ত প্রতিবাদ শুধু আযানের সুরে সুরে ...

ওরা জাইতুনের ঢাল মাটিতে ছুড়ে ফেলে অস্ত্র তাক করেছে

ওরা শান্তির পায়রাকে হত্যা করে শকুন পুষতে শিখেছে৷

কোন পথে চলছি আমরা হায় পরোয়ারদিগার

তোমার অস্তিত্ব স্বীকার করি আমরা যে গোনাগার

ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের নাম দিলাম মৌলবাদ.....

পাল্টে ওরা জবাব দিলো আমাদের, ‘‘তোরা নাস্তিক – মুরদাত''৷

একি আমরা দেখছি হায় পরোয়ারদিগার

হত্যাকারী আর জেনাকারীরা সেজেছে নব্য পয়গম্বার৷

‘৭১-এর কাফের সন্তান'কে ক্ষমা করেছে আদালত

রোজ হাশরে তুমি ক্ষমা করবেনা এই আমাদের এবাদত৷

দেশটা আর শান্তির কথা ভেবে আমরা রয়েছি নীরব

যখন নীরবতা ওরা দুর্বলতা ভাবে রক্ত করে টগবগ ..

ওদের প্রতিটি হুমকি প্রতিটি আঘাত বুঝতে আমরা শিখেছি

ওদের স্বাধীন বাংলার পতাকাতলে আশ্রয় করে দিয়েছি৷

কোন পথে চলবো আমরা হায় পরোয়ারদিগার

বাংলাদেশের সব ধর্মের আছে সমঅধিকার

অনেক কাল তোমার কেটে গেছে মাবুদ মন্দিরে মসজিদে..

সময় এসেছে, প্রভু, এসো অন্তরে .....

কোন পথে চলছি আমরা হায় পরোয়ারদিগার

পৃথিবীর তামাম কালামে তুমি ফিরে এসেছো বারেবার৷

তারা ভুলে গেছে তোমার ভালোবাসা আর প্রাচীন পরম্পরা

প্রতিদিন বৈষম্য আর বিদ্বেষ দেশ জুড়ে....

শঙ্খ আর আযানের ধ্বনি উঠুক মন্দিরে মসজিদে ।

ওরা উৎকৃষ্ট মানবজাতির দাবিতে অস্ত্র তাক করেছে

ওরা তোমার বিধান লঙ্ঘন করে জল্লাদ হতে শিখেছে৷

শঙ্খ আর আযানের ধ্বনি উঠুক মন্দিরে মসজিদে ।

ওরা উৎকৃষ্ট মানব জাতির দাবিতে অস্ত্র তাক করেছে

ওরা তোমার বিধান লঙ্ঘন করে জল্লাদ হতে শিখেছে৷''

প্রজন্ম চত্বর এমন অতীত আর বর্তমান বাস্তবতাকে মনে করেই যু্দ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের দাবিতে সোচ্চার৷ মাকসুদও আছেন তাঁদের পাশে৷ কিন্তু তিনি মনে করেন আন্দোলনের কৌশলে একটা পরিবর্তন দরকার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘ আমরা শুধু শাহবাগে কেন বসে থাকবো? পরবর্তী যে কর্মসূচি অন্যরকম হওয়া উচিত৷ ওদের তথাকথিত সুসংগঠিত যে ঘাঁটি, যেমন মগবাজার রেলক্রসিং, দৈনিক বাংলা বায়তুল মোকাররম ক্রসিং, ওখানে আমাদের অবস্থান নিতে হবে৷ শত্রুর বুকের ওপর থাবা মেরে বলতে হবে আমাদের নড়ানো এত সহজ নয়৷ ত্রিশ লক্ষ প্রাণ এমনিতে যায়নি৷ এই প্রজন্মকে অবজ্ঞা করার ক্ষমতা, তাঁদের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনকে অবজ্ঞা করার ক্ষমতা আল্লাহ কাউকে দেননি৷ ''

সাক্ষাৎকার : আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান