1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধাপরাধের দায়ে প্রথম ফাঁসি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৩ ডিসেম্বর ২০১৩

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়৷

https://p.dw.com/p/1AYBJ
ছবি: Reuters

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো৷

মঙ্গলবার রাতে এই ফাঁসি কার্যকর করার কথা ছিল৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের স্থগিতাদেশের কারণে তা কার্যকর হলো বৃহস্পতিবার রাতে৷ সেদিনই ফাঁসির পথে সব আইনি বাধা দূর হয়৷ ফাঁসি কার্যকর করা হয় দড়িতে ঝুলিয়ে৷ আদালতের রায়েও তাই বলা হয়েছিল৷ বলা হয়েছিল জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র প্রাপ্য শাস্তি৷ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে৷

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারা মহাপরিদর্শক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা সিভিল সার্জন, সিনিয়র জেল সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷ সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলি জানান মঙ্গলবার রাত ১০টায় ফাঁসির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার ঠিক সেই সময় থেকেই এক মিনিট পর ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷ তিনি জানান ভোরে সূর্য ওঠার আগেই কাদের মোল্লার মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুরে পৌঁছে দেয়া হবে৷ সেখানেই তার লাশ দাফন হবে৷ জানা গেছে, রাত ১০টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী ১১ মিনিটের মধ্যে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়৷

Bangladesch Abdul Quader Molla Gerichtsprozess
ফেব্রুয়ারি মাসে ‘‘বিজয়চিহ্ন’’ দেখানো কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো ডিসেম্বরেছবি: Strdel/AFP/Getty Images

ফাঁসির প্রস্তুতি হিসেবে দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ ঢাকাসহ বড় বড় শহরে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বিজিবি৷ আর সন্ধ্যার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ চারপাশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়৷

ফাঁসির আগে সন্ধ্যায় কাদের মোল্লার স্ত্রী সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনরা কাদের মোল্লার সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেন৷ কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল তখন বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমার পিতাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷'' কাদের মোল্লার আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার কারাগারে তার সাক্ষাৎ চেয়েও পাননি৷ তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন কাদের মোল্লা ন্যায়বিচার পাননি৷

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, কাদের মোল্লার নতুন করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ ছিল না৷ কারণ তিনি আগেই প্রাণভিক্ষা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন৷ আর ট্রাইব্যুনাল আইনে জেল কোড প্রযোজ্য নয়৷ রিভিউ আবেদন বাতিল হওয়ায় কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়৷

এদিকে দণ্ড কার্যকর করার আগে থেকেই সারাদেশে জামায়াত-শিবির সহিংসতা শুরু করে বলে খবর পাওয়া যায়৷ ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রধান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বুধবার গভীর রাতে৷ আর জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার প্রতি ফোঁটা রক্তের হিসাব নেয়ার হুংকার দিয়েছে৷ কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে জামায়াত রবিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে৷

এদিকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে শত শত মানুষ উল্লাস প্রকাশ করেছেন৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো৷ ৪২ বছর পরে হলেও একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হলো৷ তিনি আশা করেন সব যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডই কার্যকর হবে৷

Dhaka Urteil Abdul Quader Mollah 12.12.2013
বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ দেখা করেন মোল্লার পরিবারের সদস্যরাছবি: Reuters

এর আগে জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷

২০১০ সালের ১৩ জুলাই কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়৷ একই বছরের ১৪ অক্টোবর তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়৷ গত বছরের ২৮ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ আর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৩ জুলাই থেকে৷ চলতি বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২৷ কিন্তু এই রায় মেনে নিতে পারেনি দেশের তরুণ প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষ৷ ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ৷ গড়ে ওঠে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ৷ তারা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন৷ সরকার শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান করে৷ এরপর হাইকোর্টের আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে এবং কাদের মোল্লা খালাস চেয়ে আপিল করে৷ ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে৷ ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-২৷ ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ৷ তবে তার আগেই রাত ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আসামি পক্ষের আবেদনে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত করেন৷ পরদিন ১১ ডিসেম্বর তারা রিভিউ আবেদন করেন৷ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ এই আবেদন খারিজ করে দিলে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার পথে সব বাধা দূর হয়৷

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কাদের মোল্লা ঢাকা, কেরানীগঞ্জ এবং ফরিদপুরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজের মতো জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়৷ কাদের মোল্লাই হলেন প্রথম, যার দণ্ড কার্যকর হলো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য