মাটির নীচে বসবাস
শিরোনাম ভুল বলছে না৷ সত্যিই মাটির নীচে বিশেষ কোনো সুবিধা ছাড়াই বসবাস করছে মানুষ৷ বুখারেস্টের গৃহহীন শিশুরা শহরের ভূগর্ভস্থ টানেলে বাস করে৷ সেখানে না রয়েছে বিদ্যুৎ, না আছে আলো৷
টানেলে বসবাস
ক্রিস্টিনার বয়স ১৯ বছর৷ রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে বসবাসরত আরো অনেক গৃহহীন তরুণের মতো তিনিও মাদকাসক্ত৷ ভাই-বোনদের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ টানেলে বসবাস করেন ক্রিস্টিন৷ তাঁর কথায়, এভাবে বসবাস অত্যন্ত কঠিন৷ নিজেকে পরিষ্কার করার মতো পানি নেই সেখানে৷ মাঝেমাঝে খাবারও থাকে না৷ বুখারেস্টের অবস্থানরত ছয় হাজার গৃহহীনের মধ্যে এক হাজারই শিশু৷
বাড়ির মতো জায়গা?
বুখারেস্টের মাটির নীচে থাকা টানেলের মধ্যে নিজের বসবাসের জায়গাটুকু খানিকটা গুছিয়েও নিয়েছেন কেউ কেউ৷ বিদ্যুৎ নেই সেখানে৷ তাই কারিনা মোম জ্বেলে আলোর ব্যবস্থা করেন৷ অনেক গৃহহীন শিশু এতিম খানায় বড় হয়েছে৷ এরপর একসময় সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বেছে নিয়েছে মাটির নীচে বসবাসের জীবন৷ এসব টানেল মূলত শহরের হিটিং ব্যবস্থা চালু রাখতে, এবং ময়লা পানি সরিয়ে নিতে ব্যবহার করা হয়৷
গৃহহীন শিশুদের নতুন প্রজন্ম
রোমানিয়ায় বিপ্লবে ২৫ বছর পর এক গৃহহীন, মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম এখন রাস্তায় ঘুরছে, যাদের বাসস্থান মাটির নীচে৷ ১৯ বছর বয়সি মোনা সন্তানসম্ভাবা৷ এটা তার দ্বিতীয় সন্তান৷ প্রথম সন্তান এবং ছেলেবন্ধুকে নিয়ে টানেলে বসবাস করেন তিনি৷
শীতের মধ্যে টিকে থাকা
২০ বছরে পা দেয়া রেমুস একা থাকতে পছন্দ করেন৷ বুখারেস্টের কেন্দ্রস্থলে একটি টানেলে বাস তাঁর৷ মোটামুটি পা ছড়িয়ে থাকার মতো একটি জায়গা পেয়েছেন তিনি৷ তবে তাঁর আবাসের পাশেই রয়েছে হিটিং সিস্টেম৷ তাই শীতকালে বেশি কষ্ট হয় না৷
আগে ছিল এতিমখানায়
রুমানিয়ার কমিউনিস্ট যুগের একনায়ক নিকোলা চাওশেস্কু গর্ভনাশ নিষিদ্ধ করেছিলেন৷ তাই তখন এতিমখানার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল৷ কিন্তু কমিউনিস্ট যুগ শেষ হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে এতিমখানাগুলোর অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে পড়ে৷ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় অনেক শিশু এতিমখানা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়৷
মাদক বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের আড্ডাস্থল
বুখারেস্টের ‘গাড় দ্য নর্ড’ ট্রেন স্টেশনের কাছে থাকা একটি পার্কের নীচেই রয়েছে টানেল৷ সেই টানেলে একটি ব্যাগ পৌঁছে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ ট্রেন স্টেশনের পাশের এই পার্ক মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত৷ পার্কের মাটির নীচের টানেলে বাস করেন অনেকে৷
থাকেন বৃদ্ধরাও
বুখারেস্টের মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকার কাছের একটি টানেলে বসবাস করেন এই বৃদ্ধ দম্পতি৷ রোমানিয়ার রাজধানীতে বসবাসরতদের মধ্যে ছয় হাজারের মতো গৃহহীন রয়েছে৷ শীতের সময় এদের অনেকেই মাটির নীচে আশ্রয় খোঁজে৷
মাদক গ্রহণ
চার বছর বয়সি পেপিটা যখন চিপস চিবাচ্ছে, তার এক বোন ক্রিস্টিনা তখন বিশেষ ধরনের মাদক সেবনে ব্যস্ত৷ পেপিটা জানায়, টানেলের মধ্যে বসবাস সহজ নয়৷ মাঝেমাঝে এত লোক সেখানে থাকে যে শব্দে ঘুমাতে পারিনা৷ কিন্ডারগার্টেনে যেতে পারলে ভালো হতো৷
শিশু লালনপালন
৩২ বছর বয়সি নিকোলেটা তৃতীয়বার সন্তানসম্ভাবা হয়েছেন৷ ছেলেবন্ধুসহ তিনি একটি পার্কের মধ্যে ক্যাম্প করে থাকেন৷ তাঁর আগের দুটি সন্তান লালনপালনের জন্য সরকার নিয়ে গেছে৷ তবে অনাগত সন্তানটিকে সাথে রাখতে চান নিকোলেটা৷ সেটা সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল৷ কেননা গৃহহীন কিংবা মাদকাসক্ত মায়েদের কাছ থেকে সন্তান নিয়ে যায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের লোকেরা৷
রাস্তার জীবন থেকে সরে আসা
২৪ বছর বয়সি সের্গিউ ছোটবেলায় কিছুদিন এতিমখানায় কাটিয়েছেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে এসে টানেলে বসবাস শুরু করেন তিনি, হয়ে পড়েন মাদকাসক্ত৷ এখন সুস্থ জীবনে ফিরতে চান তিনি৷ তাই টানেলের জীবন বাদ দিয়ে এখন বাস করছেন একটি সেতুর নীচে৷ রাস্তার জীবন পেছনে ফিরে এগিয়ে যেতে কারিগরি স্কুলে লেখাপড়াও করেছেন তিনি৷