1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জেব্রা মাছের ডোরা আসে কোথা থেকে?

কারিসা পারমিতা/এসি২৮ জুন ২০১৪

জেব্রা মাছ বা ডোরাকাটা মাছ আমাদের অনেকের পরিচিত, বিশেষ করে যাঁরা অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ পোষেন, তাঁদের৷ কিন্তু এই ‘জেব্রা দানিও’ যে একটি ‘মডেল অরগ্যানিজম’ বা ‘আদর্শ প্রাণিসত্তা’, তা কি জানতেন?

https://p.dw.com/p/1CRIc
ছবি: imago/blickwinkel

ডোরাকাটা ‘জেব্রা দানিও' অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়৷ মাছটির বাস হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী ও ঝর্ণাগুলিতে৷ আবার বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও এদের ব্যবহার করা হয়, যেমন জার্মানির ট্যুবিঙেন শহরের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে৷

মনুষ্যদেহের বিকাশ বোঝার জন্য পরীক্ষাগারে এই জেব্রা মাছ পর্যবেক্ষণ করা হয়: ট্যুরিঙেন শহরে মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ঠিক যা করছেন৷ ১৯৯৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ক্রিস্টিয়ানে ন্যুসলাইন-ফলহার্ড এখানেই কাজ করেন৷ তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে, মানুষ এবং অপরাপর প্রজাতির জীবদের সঙ্গে জেব্রা মাছের অনেক সাদৃশ্য আছে, যে কারণে জেব্রা মাছকে ‘মডেল অরগ্যানিজম' বা আদর্শ প্রাণিসত্তা বলে গণ্য করা হয়৷ ক্রিস্টিয়ানে ন্যুসলাইন-ফলহার্ড বলেন:

‘‘মাছেরা মেরুদণ্ডী প্রাণী, কাজেই মেরুদণ্ডী প্রাণীদের যাবতীয় বুনিয়াদী প্রণালী মাছেদের মধ্যেও দেখা যায়৷ শরীরের বিপাকের শক্তি কিংবা হজমশক্তি, কিংবা রক্ত অথবা হৃৎপিণ্ড, জেব্রা মাছে এ সব বুনিয়াদী প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখা যায়, যার পর প্রশ্ন জাগে: ‘এগুলো কি মানুষের মধ্যে এক, না আলাদা?' মানুষকে দিয়ে কাজ শুরু না করে প্রথমে জেব্রা মাছ নিয়ে কাজ করার সুবিধেটা হলো সেখানে৷''

ল্যাবোরেটরিতে

গত এক দশক ধরে মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি-র গবেষকরা অনুসন্ধান করে দেখছেন, জেব্রা মাছেরা তাদের ডোরাগুলো পায় কোথা থেকে৷ জীবদেহের মলিকিউলের অনুসন্ধান অথবা বিশ্লেষণের জন্য গবেষকরা মাছের ভ্রূণে ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন ঢুকিয়ে দেন, যা আলো বিকিরণ করে৷ ল্যাব ম্যানেজার ব্রিগিটে ভাল্ডারিশ বলেন:

‘‘আমি কোষ প্রতিস্থাপন করছি, অর্থাৎ আমি দাতা ভ্রূণগুলিতে একটি ফ্লুরোসেন্ট মার্কার দিয়েছি৷ এই দাতা ভ্রূণগুলি গ্রহীতা ভ্রূণের অংশ হয়ে যাচ্ছে এবং সেই গ্রহীতা ভ্রূণের মধ্যেই বেড়ে উঠছে৷ এই পদ্ধতিতে আমি বাড়ন্ত ভ্রূণগুলিতে এক-একটি কোষের খোঁজ রাখতে পারছি সেগুলি বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত৷''

বিকাশের সূচনায় যখন কোষগুলির অভিবাসন শুরু হয়, তখন সেগুলোকে নীল থেকে অতিবেগুনি রশ্মির আলোয় সবুজ দেখায়৷ গবেষকরা এই কোষ অভিবাসন পর্যবেক্ষণ করে জীবদেহের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন, যেমন ক্ষতের নিরাময় পদ্ধতি৷ ক্রিস্টিয়ানে ন্যুসলাইন-ফলহার্ড ব্যাখ্যা করলেন:

‘‘প্রাথমিক বিকাশের সময় কোষগুলোর টাইম-ল্যাপ্স সিকোয়েন্সে ছবি তুললে দেখা যায়, কী ভাবে হৃৎপিণ্ড তৈরি হচ্ছে, পেশিগুলো কী ভাবে তৈরি হচ্ছে, ধমনীতে কী ভাবে রক্ত বইছে৷ ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষায় এ সব করা যায় না, কেননা তাদের ভ্রূণগুলো মাতৃদেহে খুব ভালোভাবে লুকনো থাকে৷ মাছেরা ডিম পাড়ে, কাজেই মাইক্রোস্কোপের নীচে এ সব দেখা সম্ভব৷''

ময়ূরের পেখম, সাদা বাঘ ও ডোরাকাটা মাছ

ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বা জীবদেহের বিকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞানে এখনও একটি প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি: জেব্রা মাছের নিকটাত্মীয়দেরও অন্যরকম দেখতে কেন? একই পূর্বপুরুষ থেকে যাদের উৎপত্তি, তারা নানা ধরনের রং ও নকশা পায় কোথা থেকে? জীববৈচিত্র্যে এই প্রক্রিয়ার ভূমিকা কী? আবার ক্রিস্টিয়ানে ন্যুসলাইন-ফলহার্ড:

‘‘আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি, ময়ূর তার ছটা পায় কোথা থেকে, তার পেখম, তার বর্ণালী৷ এ রহস্যের সমাধান হয়ত আমরা কখনোই করতে পারব না, কেননা ময়ূরদের পর্যবেক্ষণ করা সোজা কাজ নয় – যেমন সাদা বাঘদের পর্যবেক্ষণ করা আরো কঠিন!''

গবেষকরা ইতিমধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছেন যে, সাদা বাঘরা সাদা হয় একটি জেনেটিক মিউটেশন বা জিন-গত রূপান্তর থেকে৷ মানুষ ও জীবজন্তুর অ্যালবিনিজম-এর ব্যাখ্যাও তাই৷ কে জানে, হয়ত দীন-হীন জেব্রা মাছ একদিন ময়ূরের পেখম তোলার রহস্যও ভেদ করতে সাহায্য করবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য