1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলার কৃষকের জার্মান জয়

হারুন উর রশীদ স্বপন১৪ জুলাই ২০১৪

মাগুরার কৃষক আমজাদ হোসেন এখন জার্মান ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের সদস্য৷ শুধু তাই নয় জার্মান ফুটবল দলের প্রতি তাঁর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকায় জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত৷

https://p.dw.com/p/1CcLb
শনিবার বিকেলে মাগুরা স্টেডিয়ামে আমজাদ হোসেন তাঁর প্রায় তিন কি.মি. দীর্ঘ জার্মানির পতাকা প্রদর্শন করেনছবি: picture-alliance/dpa

আমজাদ প্রায় তিন কি.মি. দীর্ঘ জার্মানির পতাকা তৈরি করে জার্মানির প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রকাশ করেন৷ সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়ে গেল মাগুরা স্টেডিয়ামে, শনিবার বিকেলে৷ ১৯৮৭ সালে দুরারোগ্য এক অসুখে আক্রান্ত হলে কৃষক আমজাদ হোসেন (৬৫) চিকিত্‍সার জন্য বিভিন্ন পথ্য ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাননি৷ শেষে জার্মানি থেকে আনা ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি৷ তারপর থেকেই জার্মানির প্রতি অনুরাগ তাঁর৷

আর এই অনুরাগ ও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় প্রায় ৩৫০ গজ লম্বা জার্মানির একটি পতাকা তৈরি করেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় সাত হাজার গজ লম্বা করেন আমজাদ৷ ঐ বছর গ্রামের লোকজন নিয়ে পতাকাটি মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে নিয়ে প্রদর্শন করেন৷

আর এবারের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ করেন তিনি৷ পতাকা তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা৷ এক যুগ ধরে তিনি অল্প অল্প করে ওই পতাকা তৈরি করেছেন৷ অভাবের সংসারে এজন্য তাঁকে নানা গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে৷ বিক্রি করেছেন চাষযোগ্য জমি৷

এ খবর সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে আকৃষ্ট হয় ঢাকার জার্মান দূতাবাস৷ ঢাকায় জার্মানির শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে শনিবার বিকেলে মাগুরায় যান আমজাদের তৈরি করা তিন হাজার গজ দীর্ঘ পতাকাটি দেখতে৷ মাগুরা স্টেডিয়ামে তাঁর সেই পতাকার প্রদর্শনী হয়৷ আমজাদের গ্রামের লোকেরাই সাজিয়ে তোলেন দীর্ঘ পতাকাটি৷ ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহে তা ঘুরে ঘুরে দেখেন৷

3,5 Kilometer lange Deutschlandfahne in Magura Bangladesh
আমজাদ হোসেনের হাতে জার্মানির জার্সি তুলে দিচ্ছেন শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফ্যার্ডিনান্ড ফন ভেহেছবি: picture-alliance/dpa

দেখার পর সেখানে জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমজাদ হোসেনকে জার্মান ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ দেয়ার ঘোষণা দেন৷ পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক, জার্মান জাতীয় দলের পতাকা, জার্সি ও একটি ফুটবল৷

অন্যদিকে আমজাদ হোসেন জার্মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের হাতে কুলা, বাঁশি, ডালাসহ কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন৷ এ সময় মাগুরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের সেক্টর বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন৷

রাষ্ট্রদূত পরে ঘোড়ামারা গ্রামে আমজাদ হোসেনের বাড়িতেও যান৷জার্মানির প্রতি আমজাদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমি অভিভূত৷ ভালোবেসে জার্মানির এত বড় পতাকা এর আগে কেউ তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই৷ বাংলাদেশের একজন কৃষক ওই পতাকা তৈরি করায় তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ৷’’

মাগুরার ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কোনো লাভের আশায় আমি জার্মানির সুবিশাল এ পতাকা তৈরি করিনি৷ জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং জার্মান ফুটবল দলের প্রতি ভালবাসা থেকেই এ কাজ করেছি৷’’ জার্মানির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমজাদ বলেন সামনের বিশ্বকাপে তিনি আরো বড় পতাকা তৈরি করবেন৷ এর আগে শনিবার দুপুরে ঘোড়ামারা গ্রাম থেকে আমজাদ মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে মাগুরা শহরে আসেন৷ তাঁর সঙ্গে গ্রামবাসীই বহন করে আনে লাল-কালো-হলুদের দীর্ঘ জার্মান পতাকা৷

গ্রামের লোকজন জানান, তারা আমজাদের এই কাজকে প্রথম প্রথম 'পাগলামী' মনে করলেও পরে তার দৃঢ়তা এবং ভালবাসায় তাঁরা মুগ্ধ হন৷ তাঁরা পতাকা প্রদর্শনীতে সহায়তাও করেন৷ গ্রামবাসী জানান, আমজাদের কারণে তাদের ঘোড়ামারা গ্রামে জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত অনেক বেড়েছে৷

3,5 Kilometer lange Deutschlandfahne in Magura Bangladesh
ছবি: picture-alliance/dpa
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য