ঘুম তাড়ানোর কিছু উপায়
সবেমাত্র দুপুর, অথচ তারই মধ্যে ক্লান্ত৷ শত চেষ্টা করেও কেন যেন পুরোপুরি জেগে থাকা বা কাজে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না৷ অসময়ে ঘুম আর ক্লান্তির কী কারণ এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় জেনে নিন এই ছবিঘর থেকে৷
অসময়ে ক্লান্তি বা ঘুমের ভাব
আপনি কি রাতে পার্টিতে গিয়েছিলেন কিংবা আপনার ছোট্ট শিশুটি কান্নাকাটি করেছে সারা রাত? নাকি রাত জেগে অফিসের বিশেষ প্রজেক্টের কাজটি শেষ করতে হয়েছে? কিন্তু এখন অফিসে বসে যে কারণেই আপনার ক্লান্ত বোধ হোক না কেন, আপনাকে তো জেগে থাকতেই হবে৷ অর্থাৎ ‘বস’-এর নজরে পরার আগে পুরো মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে৷
দিনের শুরু
রাতে কোনো কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হলে ঘুম থেকে উঠে কুসুম-কুসুম গরম পানি দিয়ে অবশ্যই গোসল করতে হবে৷ সব শেষে শরীরে, হাতে-পায়ে খুব ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন৷ এতে শরীরে রক্ত চলাচল তো ভালো হবেই, হিম ঠান্ডা জল শরীরটাকেও করবে ঝরঝরে আর অনেক হালকা৷ এছাড়া চাইলে শাওয়ারের নীচে গান গাইতে গাইতে মনটাকেও প্রফুল্ল করে নিতে পারেন৷
সকালের নাস্তা
একটি সুন্দর দিনের জন্য সকালে ভালোভাবে নাস্তা করা খুব জরুরি৷ তবে ভারি নাস্তা না করে বিভিন্ন শষ্যদানাসহ রুটি, কলা বা অন্য কোনো ফল, সামান্য দই, মিষ্টি আর সঙ্গে কফি বা চা খান৷ এতে পেট ভরবে, বাড়বে ‘এনার্জি’-ও৷ চাকরিজীবী বা ছাত্রদের জন্য সকালের প্রতিটি মিনিটই খুব মূল্যবান৷ কিন্তু তারপরও নাস্তার জন্য একটু সময় বের করে যে নিতেই হবে!
গান শুনুন
গান মানুষের আবেগকে নাড়া দেয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলিকে জাগিয়ে তোলে৷ তাই অফিসে অসময়ে ক্লান্ত বোধ করলে প্রিয় গানটি চালিয়ে দিন এবং নিজেও মাথা নেড়ে নেড়ে গুন গুন করুন৷ ঘরে সহকর্মীরা থাকলে অবশ্যই কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনবেন৷ এক্ষেত্রে হাল্কা, ধীর গান উপযোগী হলেও, হিপহপ, জ্যাজ বা হালকা রক মিউজিকও চলতে পারে৷
মুখ, চোখ, কান, নাক সজাগ তো?
মুখকে সজাগ রাখতে পুদিনা পাতার ফ্লেবার দেয়া চুইংগাম চিবাতে থাকুন৷ নাকের জন্য পুদিনা পাতার তেলের গন্ধ নিতে পারেন৷ অন্যদিকে চোখের আরামের জন্য একটু চোখ বন্ধ করুন বা জানালা দিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন৷ আর কানকে সজাগ করতে লতিটা একটু টিপে টিপে আলতো করে নীচের দিকে কয়েকবার টানুন৷
শরীরকে জাগিয়ে তুলুন
কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাঙ্গন যেখানেই হোক না কেন ক্লান্ত লাগলে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে লিফ্টের পরিবর্তে হেঁটে যান৷ সম্ভব হলে ক্যান্টিন থেকে ঘুরে আসুন৷ পথে কারো সাথে দেখা হলে দু-চার মিনিট হালকা বিষয়ে কথা বলুন৷ আর বাইরে যাবার সুবিধা থাকলে ১০ মিনিটের জন্য খোলা বাতাসে হেঁটে আসতে পারেন, চোখে-মুখে দিতে পারেন পানির ঝাপটাও৷
চাবির সাহায্যে ঘুম
জার্মানদের অনেক সময় দেখা যায় অফিস বা গাড়ি চালানোর সময় খুব ক্লান্ত লাগলে হাতে চাবির ছড়া নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন৷ কয়েক মিনিট ঘুমানোর পর যখন হাত থেকে চাবির ছড়াটি পড়ে যায়, তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন যে, প্রয়োজনীয় ঘুমটুকু হয়ে গেছে৷
হাত-পা নাড়ানো
বেশিক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যায়৷ তাই অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর একবার করে দাঁড়িয়ে বা উঠে একটু হাঁটাহাঁটি বা হাত-পা নাড়াচাড়া করা উচিত৷ মাঝে মাঝে ঘাড়টাকেও একটু এদিক সেদিক ঘোরাবেন৷ তাছাড়া চেয়ারে বসে পা দুটোকে শব্দ করে নাচাতে পারেন – এতে ঘুম তাড়ানো খুব সহজ৷
এনার্জি ড্রিংককে না বলুন
এই ড্রিংক পান করলে অল্প সময়ের জন্য খুব তাড়াতাড়ি তরতাজা বা ফ্রেশ বোধ হয় – একথা যেমন ঠিক, তেমনি এও ঠিক যে পরে আরো বেশি ক্লান্ত লাগে৷ ঘুমকে ব্যাহত করে এবং পরের দিনও এর রেশ থেকে যায়৷ কাজেই এনার্জি ড্রিংক থেকে দূরে থাকুন৷ বরং সামান্য গরম পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস বা কমলার রস মিশিয়ে পান করুন, নিজেকে তরতাজা লাগবে৷
দুপুরের হালকা খাবার
দুপুরে হালকা খাওয়া-দাওয়া করা ভালো৷ খিদে পেলে মাঝে মধ্যে চার বা পাঁচটি কাঠ বাদাম বা কাজু বাদাম খেতে পারেন৷ সাধারণ টক দই বা আপেল সাথে রাখুন৷ লাঞ্চের সময় সহকর্মীদের সাথে হালকা বিষয় নিয়ে কথা বলুন৷ তাছাড়া খুব ঠান্ডা পানি পান করলেও তা ঘুমের ভাব দূর করতে সাহায্য করে৷
কিছু নিয়ম মেনে চলুন
আপনার বয়স যতই হোক না কেন, প্রতিদিন একই সময় বিছানায় যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করলে দিনের বেলা ‘ফিট’ থাকতে তেমন আর সমস্যা হয় না৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তো আর কথাই নেই৷ কাজেই এই দিকগুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখলে সহজে ক্লান্তি বোধ আসে না৷ অবশ্য যদি না শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা থাকে৷
হরমনের ভূমিকা
মাঝে মাঝেই ক্লান্ত বোধ করলে আর অপেক্ষা না করে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ থাইরয়েড হরমনের ভারসাম্য সঠিক না হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়৷ বিশেষ করে ক্লান্ত বোধ, শুস্ক ত্বক, বিষন্নতা, কাজে অমনোযোগ, ওজন বাড়া ইত্যাদি৷ কাজেই এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারি চেকআপ করিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷