জীবাণুমুক্ত থাকার ১৩টি উপায়
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নানা জীবাণু, যা আমরা হয়ত লক্ষ্যই করি না৷ এ সবই কি মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার একটা বড় কারণ? একটু সচেতন হয়ে কিভাবে এই সব জীবাণু থেকে নিজেকে দূরে রেখে সুস্থ থাকবেন – তারই কিছু উপায় পাবেন এখানে৷
হাত ধোয়া
গাড়ি, রিক্সা, কোনো কিছুর দরজা বা হ্যান্ডেল সাধারণত আমরা হাত দিয়েই ধরি৷ অথচ সেগুলোতে কতজন হাত দিয়েছে, তার কোনো ঠিক নেই৷ তার ওপর বাতাসেও ছড়িয়ে নানা জীবাণু৷ তাই বাইরে থেকে এসে প্রথমেই খুব ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন৷ তা না হলে বাইরের জীবাণুগুলো খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারে আপনার শরীরে৷
কম্পিউটার
আজকের দিনে প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে কম্পিউটারের ব্যবহার৷ চাকরির প্রয়োজনে যাঁদের ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ – কাজ শুরুর আগে হাত দুটো ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ দিয়ে মুছে নেবেন এবং কাজ শেষ হওয়ার পর ঐ একই পদ্ধতিতে হাত পরিষ্কার করে ফেলবেন৷ এছাড়া বাড়িতে ঢুকেও প্রথম কাজ হতে হবে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলা৷
রান্নাঘর
রান্নাঘরেই লুকিয়ে থাকতে পারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবাণু৷ কাঁচা মাংস কাটার পর সেই কাটিং বোর্ডে অন্য কিছু কাটাকাটি করা হলে, যা তার সংস্পর্শে আসবে, তাতেই মাংসের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাই কাঁচা মাছ, মাংস কাটার জন্য আলাদা বোর্ড ব্যবহার করুন৷ আর তা ব্যবহারের পর বোর্ড, ছুড়ি, দা এবং অবশ্যই হাত দুটো ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ এছাড়া রান্নাঘরের কাঁচা আবর্জনা পরিষ্কার করুন প্রতিদিন৷
বাথরুম
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বেশিরভাগ বাড়িতেই বসার ঘর কিংবা শোবার ঘর যতটা পরিষ্কার বা সুন্দর করে সাজানো থাকে, রান্নাঘর বা বাথরুমের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা দেখা যায় না৷ অথচ বাথরুম এবং রান্নাঘরই হচ্ছে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা৷ তাই বাথরুম সব সময় শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন৷ তার সঙ্গে ব্যবহৃত টয়লেট পেপার বা কসমেটিক পেপার সহ সব ময়লা নিয়মিত সরিয়ে ফেলুন৷
ব্যবহৃত যে কোনো ব্রাশ
রান্নাঘর, বাথরুম অথবা বাড়ির অন্য কোনো ঘরই বলুন, সেই সব জায়গা পরিষ্কার বা মোছার জন্য ব্যবহার করা ব্রাশটিতে কিন্তু থাকে অসংখ্য জীবাণু৷ তাই ব্রাশগুলো ব্যবহারের পর প্রতিবারই ধুয়ে এবং পানি চিপে ফেলে দিয়ে পরেরবার ব্যবহারের জন্য রেখে দিন৷ এছাড়া মাসে অন্তত একবার পুরনো ব্রাশ ফেলে দিয়ে নতুন ব্রাশ কিনে আনুন৷
টুথ ব্রাশ
দাঁত মাজার ব্রাশের ভেতরও জমে থাকতে পারে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া৷ তাই সময়মতো, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত৷ তা না হলে নিজের ব্রাশের জীবাণুই আবারো নিজেরই ক্ষতি করতে পারে৷ এছাড়া ‘‘প্রতিবার ব্যবহারের পর টুথব্রাশটি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷’’ একথা বলেন কোলন শহরের দাঁত বিশেষজ্ঞ ডা. আইকার৷
ঘরের ভেতরের গাছের পানি
অনেকেই সখ করে ঘরে গাছ লাগিয়ে থাকেন৷ এ সব গাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দেওয়া হলে, তা জমে জীবাণুর জন্ম হয়, যা কিনা সে’সব জায়গায় বসা মশা, মাছি বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
ইনজেকশনের সিরিঞ্জ
নানা কারণেই মানুষকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়৷ তবে ইনজেকশন দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত সিরিঞ্জটি নতুন কিনা৷ কারণ সিরিঞ্জটি আগে যে ব্যবহার করেছেন, তাঁর কোনো ছোঁয়াচে রোগ থাকলে এর মধ্য দিয়ে অন্য আরেকজন আক্রান্ত হতে পারেন সহজেই৷ বলা বাহুল্য, এইচআইভি ভাইরাসের মতো বিপজ্জনক ভাইরাসও কিন্তু এভাবে ছড়াতে পারে৷
বাতাসে জীবাণু ছড়ায়
সার্দি-কাশি বা হাঁচিতে জীবাণু ছড়ায় – সেকথা কম-বেশি আমরা অনেকেই জানি৷ তাই এ ধরণের রোগীদের থেকে খানিকটা দূরে থাকাই ভালো৷ এ সব অসুখ ছড়ায় সাধারণত, বাস, ট্রেন, মিটিং, মিছিল বা সেই সব জায়গায় যেখানে অনেক মানুষের যাতায়াত৷ যাঁরা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা সহজেই এভাবে আক্রান্ত হয়ে পরতে পারেন৷
পানি
পানির আরেক নাম জীবন৷ পানি পান করা ছাড়াও প্রায় সব কাজেই প্রয়োজন হয় পানির৷ তবে যে কোনো জায়গার পানি পান না করাই ভালো৷ পানি বাহিত রোগের কথা কে না জানে? তাই প্রয়োজনে এক বোতল ফুটন্ত পানি বাড়ি থেকে সাথে নিয়ে বের হন৷ অথবা পথেই ‘মিনারেল ওয়াটার’-এর বোতল কিনে নিন৷ গোসলের সময়ও লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে পানি পেটে না চলে যায়৷
সতর্কতা
জীবাণু সম্পর্কে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সতর্ক করে দেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে, অন্য কোথাও টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত, সেই ছোট থেকেই৷ বাইরের খাবারের ব্যাপারেও ভলোভাবে সতর্ক হওয়ার কথা শিশুদের বুঝিয়ে বলতে হবে৷ আর সতর্ক না হলে তার ফল যে ভয়ংকর হতে পারে – সেটারও একটা ধারণা দেয়া উচিত সেই ছোটবেলাতেই৷
রাস্তার খাবার
রাস্তা বা ফুটপাথে মজার মজার লোভনীয় খাবারের দোকানগুলো আমাদের কেমন যেন হাতছনি দিয়ে ডাকে৷ তাই না? কিন্তু খাবারগুলো লোভনীয় হলেও এ সব থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত৷ বাইরে খোলা অবস্থায় রাখা খাবারগুলোয় মাছি, ধুলোবালি পড়ে৷ অনেকক্ষণ আগে কেটে রাখা ফল বা সালাদ তো একেবারেই খাওয়া উচিত নয়৷ তবে ফুটন্ত বা রান্না করা খাবার গরম অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে৷
ভ্রমণ
অনেককেই দেখা যায় ভ্রমণ বা বেড়ানোর পর ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এর কারণ নিয়ে কি কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায়? জায়গা, পরিবেশ, খাবার সবই তো ছিল ভিন্ন৷ বিশেষ করে দূরে কোথাও গেলে তা এ কথা বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়৷ কাজেই বেড়াতে গেলে ছোট থেকে বড় সবারই বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত৷