1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল: ‘রিভিউয়ের সুযোগ নেই'

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ নভেম্বর ২০১৪

জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এ রায় আর রিভউয়ের সুযোগ নেই৷ যদি তাই হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো আইনি সুযোগও নেই৷

https://p.dw.com/p/1Dfxe
Mohammad Kamaruzzaman
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান (ফাইল ফটো)ছবি: Reuters

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস.কে. সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে৷ রায়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লীতে' নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়৷

ট্রাইবুন্যালের দেয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে গত বছরের ৬ই জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি৷ চলতি বছরের ৫ই জুন থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়৷ ১৭ই সেপ্টেম্বর শুনানি শেষ হয়৷ অর্থাৎ, এর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় সোমবার কামারুজ্জামানের করা আপিলের রায় ঘোষণা করা হলো৷ এটি আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় রায়৷ শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লীতে' নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ একমত হলেও, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে৷

গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ এই অভিযোগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ৷

Kriegsverbrechertribunal verurteilt Abul Kalam Azad zum Tode
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, কামারুজ্জামানের রায় রিভিউ করার আর কোনো সুযোগ নেইছবি: AFP/Getty Images

এর আগে দারাসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রাখে৷

একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ শুরু হয়৷ ২১শে জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় একই বছর ২৯ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তারের পর, ২রা আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ ২০১২ সালের ১৫ই জানুয়ারি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ৪ঠা জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইবুন্যাল ২-এ কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়৷ গত বছরের ৯ই মে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল৷

স্বাধীনতার পরের বছর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামারুজ্জামান৷ ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে থেকে মাস্টার্স পাস করার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে ১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামে যোগ দেন এবং ঐ বছর ১৬ই ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান৷ ১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন৷ ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন৷

আইনী সুযোগ নিয়ে বিতর্ক

আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘রিভিউ করার আর কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমি কনে করি না৷ এর আগে কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ করেছিল, তা খারিজ করে দেয় আদালত৷ এক্ষেত্রে রিভিউয়ের আর কোনো সুযোগ নেই৷''

তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ আইনে এ বিচার হচ্ছে৷ তাই সংবিধানের ১০৫ ধারা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না, রিভিউ চলবে না৷ রায় পাওয়ার পর বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঝের সময়টি জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের বিষয়৷'' তাঁর কথায়, ‘‘কখন বা কবে ফাঁসি কার্যকর হবে – তা সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়৷ আর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও জেলকোডের বিষয়৷''

তবে কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন যে তাঁরা রিভিউয়ের আবেদন করবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রিভিউ সাংবিধানিক অধিকার৷ সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে – রিভিউ করার সুযোগ নেই৷ কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও রিভিউ করা হয়েছিল৷ সুতরাং রিভিউ নিষ্পত্তি করতে হবে৷ রিভিউ গ্রহণযোগ্য না হলে খারিজ হতে পারে৷''

কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি আসামির ব্যক্তিগত বিষয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘আপিলেও ন্যায়বিচার পেলেন না কামারুজ্জামান৷ কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানতে হবে৷''

হরতাল

এদিকে কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামী বুধবার সারাদেশে হরতাল আহ্বান করেছে৷ বুধবার দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে ডাকা হরতাল শেষ হবে মঙ্গলবার৷ আর বৃহস্পতিবার হরতাল ডাকা হয়েছে আরেক জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে৷ ট্রাইবুন্যাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় রবিবার৷

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালে দণ্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন তৃতীয় ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷ এর আগে তার দলেরই আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷ এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷ চলতি বছর ১৭ই সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য