1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্দোলনের মেয়াদ কতো?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন কতদিন চালাতে হবে, তা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ হতাশ৷ তার মধ্যে অবরোধ-হরতালের প্রভাব কমে আসায় এ কর্মসূচি আদৌ চালানো যাবে কিনা – তা নিয়েও রয়েছে সংশয়৷

https://p.dw.com/p/1EcO3
Bildergalerie Bangladesch Unruhen
ছবি: DW/M. Mamun

গত ৬ই জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট গত শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে তাদের বিক্ষোভ মিছিল হয়নি৷ যা হয়েছে তা হলো ঝটিকা মিছিল৷ ঢাকায় ১৬/১৭টি পয়েন্টে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হঠাত্‍ ব্যানার বের করে কয়েক মিনিট মিছিল করে আবার কেটে পড়েন৷ ঢাকার বাইরেও কয়েক জায়গায় একইভাবে ঝটিকা মিছিল বের করেন তাঁরা৷ কিন্তু এ সব মিছিলে কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি৷ তারপরও তাঁরা আওয়ামী লীগের বাধা এবং পুলিশের প্রতিরোধের মুখে পড়েন৷ এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৬ জনকে আটক করা হয়৷

অবরোধের মধ্যে এখন বিএনপির ৭২ ঘণ্টার হরতাল চলছে৷ এই হরতাল শেষ হবে বুধবার ভোর ৬টায়৷ হরতালের দ্বিতীয় দিন সোমবার, রাজধানীতে এই হরতালের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি৷ রাজধানীর ফার্মগেট, বাংলামটর, মতিঝিল ও গুলিস্তানসহ কয়েকটি এলাকায় রীতিমত যানজটের সৃষ্টি হয়৷ ৭২ ঘণ্টা হরতালের শুরুর দিন রবিবারেও একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীতে৷ তবে দূর পাল্লার যানবাহন চলছে কম৷

অবরোধ-হরতালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা না গেলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ৷ বিশেষ করে নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানের নেতৃত্বে সোমবার খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘোরাও করা হয়৷এখানে গত ৩রা জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া অবস্থান করছেন৷

ঘেরাও কর্মসূচি প্রসঙ্গে নৌ-মন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘এখান থেকে খালেদা জিয়া ও লন্ডন থেকে তাঁর ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো বানানোর যে চেষ্টা করছে, আমরা তা বাস্তবায়ন করতে দেব না৷'' তাই তিনি গুলশান থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে নেয়ারও দাবি জানান৷

আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে ট্রাক মিছিল ও ১৯শে ফেব্রুয়ারি শ্রমিক, কর্মচারী,পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পতাকা মিছিলের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন নৌ-মন্ত্রী৷

অন্যদিকে রবিবারে হাইকোর্টের একটি আদেশ সরকারের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু একই আদেশ বিরোধী নেতা-কর্মীদের আরো চাপের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

হাইকোর্ট চলমান হরতাল-অবরোধের প্রেক্ষাপটে ‘নৈরাজ্য বন্ধ' করার প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি ‘নৃশংস অবরোধ' কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না – তা জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করা হয়েছে৷এছাড়া হরতাল-অবরোধ ডাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না – সেটা জানতে চেয়েও রুল জারি হয়েছে৷

অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ হরতাল বা অবরোধের নামে পরীক্ষা নেয়ায় কোনো বাধা দেওয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

ওদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আলোচনায় বসার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে সহিংসতা বন্ধেরও আহ্বান জানাচ্ছে৷ হরতাল-অবরোধে সারা দেশে সহিংসতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৯ জন৷ এঁদের মধ্যে পেট্রোলবোমা-ককটেল হামলায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৫২৷

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ হতাশ হয়ে পড়েছেন৷ বিশেষ করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হতাশা বাড়ছে৷ ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার যুবদল নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বাবলু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কেউ কারুর খোঁজ রাখছেন না, নেই কোনো সমন্বয়৷ সংবাদমাধ্যমে বিবৃতির মাধ্যমে আমরা কর্মসূচির খবর পাই৷ আমরা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছি৷ কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা পাই না বা তাঁদের সঙ্গে কথাও হয় না৷''

Bangladesch Politische Gewalt Polizisten in Dhaka
‘নৈরাজ্য বন্ধ' করতে পুলিশছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
Bildergalerie Bangladesch Unruhen
বাসের ভিড়ে দেশের মানুষ অভ্যস্ত কিন্তু উত্যক্তছবি: DW/M. Mamun

তিনি বলেন, ‘‘টানা মাসব্যাপী বা কয়েকমাস ধরে চলা আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের নেই৷ তাই অনেকেই ক্লান্ত হয়ে ঘরে বসে আছেন৷ গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই নিজ বাসায় থাকছেন না৷ কর্মসূচিতে অনেকেই যোগ দিতে পারছেন না৷''

মগবাজার এলকার ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আন্দোলন সফল না হলে আমাদের পরিণতি আরো খারাপ হবে৷ কিন্তু আন্দোলন সফল হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়৷ সরকার পদত্যাগ তো দূরের কথা, আলোচনাতেই রাজি হচ্ছে না৷ আর এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপও এত তীব্র নয়৷ বরং নাশকতার দায় পড়ছে আমাদেরই ওপর৷ সব মিলিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছি৷''

এদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করছেন খালেদা জিয়া এবং তাঁর বড় ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এরপর বিএনপির কোনো নেতা অজ্ঞাতস্থান থেকে বিবৃতির মাধ্যমে সেই কর্মসূচি জানাচ্ছেন৷ এরইমধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের একটি বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ ঐ বিবৃতি বিএনপির বিবৃতি নয় বলে আরেক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷ তাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে অনেকটাই অন্ধকারে৷

তবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হরতাল অবরোধে কোনো ঢিলেমি আসেনি৷ নেতা-কর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েননি৷ বরং নেতা-কর্মীরা আরো উজ্জীবীত হয়েছেন৷ আন্দোলন আরো তীব্র হয়েছে৷ যেসব নেতা-কর্মী এতদিন ঘরে বসেছিলেন তাঁরাও এবার আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন৷ কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, এই স্বৈরাচারী সরকারকে আন্দোলন করে হটানো ছাড়া বাঁচার আর কোনো পথ নেই৷''

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির দীঘদিন ধরে আন্দোলনের ইতিহাস আছে৷ স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস নয়, বছরের পর বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে৷ নেতা-কর্মীরা মাঠে থেকেছেন৷ তাই বর্তমান সময়ে মাত্র দেড় মাসে ক্লান্ত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷''

আযম খান দাবি করেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধর-পাকড়ের কারণে শনিবার ঢাকার বিক্ষোভ মিছিল হয়ত তেমন সফল হয়নি৷ তবে ঢাকার বাইরে কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকের সমাগম হয়েছে৷''

হাইকোর্টের নির্দেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ অবরোধ-হরতাল পালন করছে৷ সরকার নাশকতা করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে৷'' তাঁর কথায়, ‘‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ শুক্র ও শনিবারেও হরতাল দিয়েছে৷ তাদের কারণে তিন মাস পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল৷ আর বিএনপি এবার এসসসি পরীক্ষার জন্য শুক্র এবং শনিবারে হরতাল দিচ্ছে না, যাতে ঐ দু'দিনে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া যায়৷ হরতাল-অবরোধে সরকার চাইলেই এসএসসি পরীক্ষা নিতে পারে৷ বিএনপি তো বাধা দিচ্ছে না!''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য