1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাইন ব্লক বা আমার ব্লক

দেবারতি গুহ২ জানুয়ারি ২০০৯

ওরা তরুণ৷ গুনে দেখলে প্রায় কুড়ি জন মতো হবে৷ বয়েস ? এই ধরুন ১৪ থেকে ১৯৷ নিজেদের ওরা ডাকে ব্লকার বলে৷ কারা ওরা ? কি তাদের কাজ?

https://p.dw.com/p/GPz8
মাইন ব্লকছবি: www.meinblockmagazin.de

গত বছরের অগাস্ট মাস থেকে কোলোনের লিটারাট্যুর হাউস বা সাহিত্য পরিষদে তরুণ-তরুণীদের জন্য শুরু হয়েছে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি৷ সাংবাদিকতা এবং সাহিত্য চর্চা নিয়ে৷ সংবাদ মাধ্যমগুলির জন্য কিভাবে লিখতে হয়, কেমন করে লিখতে হয় গদ্য-কবিতা-সাহিত্য - এই সব কিছু সেখানো হয়ে থাকে ঐ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায়৷ যার নাম মাইন ব্লক বা আমার ব্লক৷

তাই সেই সব তরুণ-তরুণী, যারা এই মাইন ব্লক প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত - তারাই নিজেদের ডাকে ব্লকার বলে৷ মজার বিষয়, এদের লেখা কিন্তু কোন পত্রিকা বা গ্রন্থে স্থান পায় না৷ স্থান পায় ইন্টারনেটে৷ আজকের দিনে ইন্টারনেট সত্যিই এক বিস্ময়৷ খাতা-কলম, বই-পত্রের আর প্রয়োজনই নেই৷ ভাবা যায় ?

৯০-এর দশকেও ইন্টারনেট স্কুল-কলেজগুলিতে অথবা পড়ুয়াদের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় ছিল না৷ শুধুমাত্র কম্পিউটার স্পেশালিস্ট অথবা ইঞ্জিনিয়াররাই স্বচ্ছন্দ ছিল এই নতুন গণমাধ্যমটির সঙ্গে৷ সে সময়কার তরুণ প্রজন্মকে দেখা যেত লিটল ম্যাগাজিন বা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে৷ অথচ কোলনের ছোট্ট রিচার্ড বললো : আগে স্কুলের কয়েকজন বন্ধুরা মিলে আমরা একটা পত্রিকা বার করতাম৷ স্কুলের পত্রিকাতে লেখার জন্য নানা নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হতো৷ নিয়ম ছিল বিক্রি করার ক্ষেত্রেও৷ তাই একটা সময় তাতে সমস্যা দেখা দিল৷ বিক্রিও কমে গেল বহুলাংশে৷

আর তাছাড়া, পরবর্তী সংখ্যাতে কি কি থাকবে, কিভাবে লেখা হবে - ইত্যাদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আমাদের দলীয় মিটিং হতো৷ কিন্তু, পরীক্ষা বা ছুটির সময় সকলকে একসঙ্গে পাওয়াই ছিল দূরূহ৷ তাই আমরা ঠিক করলাম ইন্টারনেটে লিখবো৷ এক্কেবারে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এ৷ জানালো রিচার্ড৷

যেমন কথা তেমন কাজ৷ খুঁজে খুঁজে রিচার্ড আর তার বন্ধুরা জানতে পারলো ঐ মাইন ব্লক প্রকল্পটির কথা৷ শিখতে শুরু করলো গল্প লেখার কারিকুরি৷ রিপোর্ট লেখার বস্তুনিষ্ঠতা৷ কিন্তু এসব কাজ তো প্রথাগত পদ্ধিতেও সম্ভব৷ তাহলে কেন এই ইন্টারনেট মাধ্যম ? রিচার্ডের বন্ধু ওয়াসেলি জানায় : অন্যান্য মাধ্যমগুলিতে লেখা ছাপানো যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনই ব্যয়বহুল৷ খবরের কাগজগুলির দিকে তাকালেই তো তা বোঝা যায়৷ একটা খবরের কাগজ বের করতে প্রতিদিন নানা ঝক্কি পোহাতে হয়৷ এর জন্য প্রয়োজন হয় লোকবল, অর্থ আর সময়৷ কিন্তু, ইন্টারনেটে নিমেষের মধ্যে একটা লেখা প্রকাশ করা যায়৷ যা তক্ষুনি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছেও যায়৷

কিন্তু, শুধু লিখতে চাইলেই তো হবে না৷ কারণ, পত্রিকায় লেখা আর ইন্টারনেটে লেখার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য৷ তাই কোলনের সেই লিটারাট্যুর হাউসে রিচার্ড বা ওয়াসেলি শিখে নেয় সাংবাদিকতার টুকিটাকি৷ চর্চা করতে থাকে মানবাধিকার, শিশু নিপীড়ন অথবা যুদ্ধের মতো কঠিন বিষয়গুলি নিয়ে লেখারও৷

আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই মাইন ব্লক প্রকল্পটি কিন্তু একদম ফ্রি৷ অর্থাৎ, এক্কেবারে বিনামূল্যেই এই প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়৷ শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণগুলি সাধারণত দিয়ে থাকে জার্মানির অন্যতম তরুণ সাংবাদিক এবং সাহিত্যিকরা৷ প্রকল্পটির প্রধান ইনেস ডেটমান বললেন : আমরা এমনভাবে এই প্রকল্পটি তৈরি করেছি, যেখানে সময়টা কোন প্রতিবন্ধকতা নয়৷ স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা তো লেগেই থাকে৷ সে ক্ষেত্রে কোন লেখা শেষ করতে যদি একদিনের জায়গায় তিন দিন লাগে - সেটা খুব একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁডায় না৷ কারণ বিষয় পুরোনো হয়ে গেলেও, একটা পর্যালোচনা লেখা কিন্তু সব সময়েই সম্ভব৷ আর ওরা যাতে সেটা লিখতে পারে - সে রকমভাবেই প্রশিক্ষণ দেই আমরা৷

তাই রিচার্ড বা ওয়াসেলির মতো তরুণরা এভাবেই, অর্থাৎ শখের বশে, হেসে-খেলেই হয়ে ওঠে এক-একজন খুদে সাংবাদিক অথবা সাহিত্যিক৷ অচিরেই৷