1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন

মারিনা জোয়ারদার৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

এফজিএম বা যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করতে ইউরোপ ছাড়াও আফ্রিকার বেশ কিছু সংগঠন এগিয়ে এসেছে, এই সংগঠনগুলি বিষয়টি নিয়ে বেশ সোচ্চার৷

https://p.dw.com/p/Gq29
সোমালিয়ায় মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb

কেপ ভ্যার্দের একটি সংগঠন যৌনাঙ্গচ্ছেদ কে মানবাধিকার লংঘন বলে মনে করছে, ঐ সংগঠনে কাজ করছেন কাফুই আজা মাগবো জনসন৷ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এগিয়ে এসেছে যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করতে৷ তবে সবাই পেরে উঠছে না৷ সে প্রসঙ্গে মেইগা জানালেন, এখানে এফজিএম বন্ধ করতে আইন করা হয়েছে, আইন হয়েছে গৃহ নির্যাতনের বিরুদ্ধেও, তবে এসব আইন বাস্তবে রূপান্তর করা বেশ কঠিন কাজ৷

দীর্ঘদিন ধরে এফজিএম এর প্রথা প্রচলিত রয়েছে আফ্রিকা ছাড়িয়ে আরো বেশ কিছু দেশে৷ সমস্যাটি এখন আর আফ্রিকার একার নয়৷ শুরুতেই বলা হয়েছে, জার্মানি এ বিষয়ে বেশ সোচ্চার৷ জার্মানিতে এমন অসংখ্য অভিবাসী বসবাস করে যারা এমন দেশ বা সমাজ থেকে এসেছে যেখানে এফজিএম প্রচলিত৷ আশংকা করা হয়, ঐতিহ্য অনুযায়ী গোপনে তারা তাদের মেয়েদের এফজিএম করান৷ জার্মান আইনজীবী আনা লেনা জানালেন, জার্মানিতে এই প্রথা পুরোপুরি বে-আইনী৷ এটিকে দেখা হয় মানবাধিকার লংঘন হিসেবে৷ এবং কেউ যদি তাঁর মেয়েকে এফজিএম করায় তাহলে তার দশ বছর কারাদণ্ড হবে৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার লংঘন রোধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য৷

Dorfvertreter in Senegal gegen Genitalverstümmelung
নারী অধিকার ও মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সেনেগাল-এছবি: picture-alliance / dpa

যারা নিজেদের কন্যা সন্তানের ওপর এফজিএম প্রয়োগ করেছেন, এইরকম কয়েক জন বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে, জার্মানিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে আইনজীবী আনা লেনা আরো জানালেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে মুখ খুলছে না, সে কোন কথাই বলছে না৷ নিজের বাবা মায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে তারা তখনো শেখেনি – অথবা দেখা যায় বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া সে কিছুতেই মুখ খুলবে না৷ এমনকি সেই গোষ্ঠীর কেউই এ বিষয়ে কিছু বলছে না৷

সুদানের নাগরিক কাছালা নির্দ্বিধায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কিভাবে তার ওপর এফজিএম করা হয়েছিল৷ তখন তাঁর বয়স ছিল খুবই অল্প৷ সে বলল, হ্যাঁ, আমার এখনো, স্পষ্ট মনে আছে যেদিন আমার ওপর এই জঘন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল৷ আমি ভুলি নি৷ আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, কিছুতেই রাজী হই নি৷ কিন্তু আমার পরিবার আমাকে বার বার বোঝায়, আমাকে অসংখ্য উপহার কিনে দেয়৷

এ প্রসঙ্গে খার্তুমের মহিলারোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদ এল ফাদিল জানান, পুরো বিষয়টি মেনে নেয়া বেশ কষ্টকর, বিশেষ করে যখন তারা বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে বা কী হয়েছে৷ বাচ্চা প্রসবের সময় তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করে তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল৷ এই প্রথার পক্ষে আবার মহিলারাই সওয়াল করেন৷ এসব মহিলারা তাদের ছোট শিশু কন্যা সন্তানদের রেহাই দিচ্ছেন না, তাদের মেয়েদের ওপর, নাতীদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছেন এফজিএম৷

পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একটি মেয়ের ওপর করা হচ্ছে এফজিএম৷ এ ফলশ্রুতিতে তারা সারাজীবন ভোগ করে আমানবিক যন্ত্রণা৷ এর ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে৷ অনেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মারাও যায়৷ ৬০ বছরেরও বেশী সময় ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে এই প্রথা বন্ধ করার৷ যে সব দেশে এফজিএম এর প্রচলন সবচেয়ে বেশী, সুদান তার মধ্যে অন্যতম৷

২৩ বছর বয়সের নাদা মুদাথীর আওয়াদ, আবু সাইদ মসজিদে এসেছে৷ তাকে ঘিরে আরো প্রায় ১৫ জন মহিলা৷ সবাই জানতে চায় নাদা আওয়াদের কথা৷ কী হয়েছিল তাঁর? নাদা আওয়াদ জানালেন, অনেক ছোট বেলায় ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা৷ নাদা জানান, হ্যাঁ, আমার ওপর যখন এই অস্ত্রোপচার করা হয় তখন আমি অনেক ছোট৷ আমি তখনো পুরোপুরি সাবালিকা হই নি৷ সমস্যা হচ্ছিল তখন থেকেই৷ যদিও টাইপ-১ এফজিএম করা হয়েছিল কিন্তু সেটিও ছিল প্রচণ্ড কষ্টকর৷ একজন ধাত্রী তা করেছিল৷ তাকে সুদানের অর্থমূল্যের ৫০ টাকা দেয়া হয়েছিল৷ যারা ধনী তারা আরো বেশী পয়সা খরচ করে থাকেন৷ এছাড়া ধাত্রীকে অনেক ধরনের দামী উপহারও দেয়া হয়৷

সুদানে এফজিএম এর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে প্রচারাভিযান৷ তাতে সামিল হয়েছে নাদা আওয়াদও৷ মাত্র ৫০ জন মহিলাকে দিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রচারাভিযান৷ আবু সাইদ মসজিদে উপস্থিত সবাইকে সে বোঝানোর চেষ্টা করছে এফজিএম এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা৷ এফজিএম কীভাবে একটি মেয়ের জীবনকে ধ্বংস করতে পারে সে কথা৷ যেভাবেই হোক এফজিএমকে রোধ করতে হবে৷ সে জানায়, আমার বয়স ছিল খুবই কম৷ সে সময় সবাইকে এই অস্ত্রপচার করানো হতো, মনে হতো তা খুবই স্বাভাবিক৷ শুরুতে খোলাসা করে কিছুতেই বল হতো না৷ বাচ্চা মেয়েরা বুঝতেও পারতো না কী করা হচ্ছে বা কী করা হবে৷ উপহারের লোভে, টাকা পয়সার লোভে আমাদের বোঝানো হয়েছিল এবং না বুঝেই আমরা রাজী হয়েছিলাম৷ শুধু বলা হতো যা করা হচ্ছে তা তোমার ভালোর জন্যই করা হচ্ছে৷