ভারত মহাসাগরে সুনামি সতর্কতার মোহড়া
১৫ অক্টোবর ২০০৯২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার আচের উপকুলে একটি ৯.১৫ শক্তির ভুমিকম্প ঘটে৷ সেই ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি ভারত মহাসাগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে৷ আক্রান্ত হয় ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ভারত৷ প্রাণ হারায় মোট ২,৩০,০০০ মানুষ, তার মধ্যে শুধু আচেতেই ১,৭০,০০০৷ তার পর সর্বত্র সুনামি সতর্কতা প্রণালী স্থাপন করা হয়েছে - তা সমুদ্রসৈকতে লাউডস্পীকার এবং সাইরেন দিয়েই হোক, বা গভীর সমুদ্রে সুনামির ঢেউ মাপবার জন্য উচ্চপ্রযুক্তির মনিটর বয়া দিয়েই হোক৷
যোগাযোগ ও সমন্বয়
কিন্তু এই সব বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন প্রণালীর মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের প্রশ্নটিও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তাই এই নতুন মোহড়া৷ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে একটি মেকি ভূমিকম্পের খবর দেওয়া হয় এসএমএস করে: বলা হয়, আচের উপকুলে একটি বড় ভূমিকম্প ঘটেছে৷ অতঃপর দেশ এবং এলাকা অনুযায়ী কোথাও হতাহতদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার ড্রিল হয়, কোথাও গ্রামবাসীরা বীচ থেকে লাউডস্পীকারে খবর পেয়ে কাছের বৌদ্ধ মঠে জড়ো হয়; সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দলে দলে ভাগ করে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন৷ - আচের ডেপুটি গভর্নর ড্রিলকে সফল বলে ঘোষণা করলেও, জাতিসংঘ তার নিজের যাচাই সমাপ্ত করবে আর কয়েক দিনের মধ্যে৷ তবে আচের কর্মকর্তা আরো একটি প্রয়োজনীয় কাজ করছেন: তিনি সকলকে যন্ত্র এবং প্রযুক্তির উপর বড় বেশী নির্ভরশীল হওয়া সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷
সুনামির গতিপ্রকৃতি
এবং তার কারণও আছে৷ কেননা সম্প্রতি আবার প্রমাণিত হয়েছে যে, ভূমিকম্প যদি অতি নিকটে ঘটে, তবে সুনামির ঢেউ ১৫ মিনিটের মধ্যে তীরে আছড়ে পড়তে সক্ষম, যে ক্ষেত্রে মানুষজনের পক্ষে কোনো জটিল সুনামির ড্রিল অনুসরণ করা সম্ভব নয়৷ সুনামির ঢেউ ছড়ায় ঘন্টায় ৮০০ থেকে ১,০০০ কিলোমিটার গতিতে, অর্থাৎ একটি জেটপ্লেনের চেয়েও দ্রুতগতিতে৷ তার ওপর গভীর জলে সেই ঢেউ-এর উচ্চতা কম হলেও, তীরের কাছে এসে কম জলে সেই ঢেউই ১০ মিটার অবধি ফেঁপে উঠতে পারে৷
কাজেই সুনামি সতর্কতা শুধুমাত্র মনিটর, বয়া, প্রযুক্তি, প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেওয়া চলে না৷ তার থেকে প্রাণে বাঁচবার জন্য চাই প্রতিটি সম্ভাব্য বিপন্ন মানুষের এক ধরণের মানসিক প্রস্তুতি এবং সচেতনতা৷
বুধবার ঐ সুনামি সতর্কতা মোহড়ায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানও ছিল৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ