1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবুজ ছাদের শহর ড্যুসেলডর্ফ

৪ জুন ২০১০

যে কোন ইউরোপীয় শহরের মত জার্মানির ড্যুসেলডর্ফও একটি শহর৷ রয়েছে যানবাহনের শব্দ, রয়েছে কলকারখানা, রয়েছে মানুষের পায়ে চলা পথ, সবুজ গাছ, উঁচু ভবন, কলকলিয়ে চলা রাইন নদী৷ কিন্তু এই শহরেরই রয়েছে ভিন্ন এক পরিচিতি৷ সেটা কী ?

https://p.dw.com/p/NhWb
গাড়ি রাখার বিশাল গ্যারেজের উপর সবুজ বাগানছবি: Umweltamt der Stadt Düsseldorf

ড্যুসেলডর্ফের বাড়ি ঘর আর উচু সব দালানের ছাদ সবুজ৷ বলা হয় সবুজ ছাদের শহর৷ আর এই ছাদগুলো এক সঙ্গে মেলালে এর দৈর্ঘ্য হবে সাত লাখ ত্রিশ হাজার মিটার! ১০০ টি বড় আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল মাঠের সমান৷ এক হাজার সাতশ ভবন এবং বহুতল বিশিষ্ট কার পার্কিং ইয়ার্ডের ছাদ জুড়ে নানা গাছ পালায় পরিপূর্ণ৷ আর এই সবুজ ছাদের কারণেই গেল বছর আর্ন্তজাতিক গ্রিন রুফ এসোসিয়েশন থেকে নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যের রাজধানী ড্যুসেলডর্ফ পেয়েছে বিশেষ পুরস্কার৷

আর্নেস্ট হাগেমান৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে তিনি তৈরি করেছেন একটি বহুতল বিশিষ্ট গাড়ি পার্কিং এর জায়গা৷ তিনিও তাঁর ভবনের ছাদটিকে গড়ে তুলেছেন সবুজ করে৷ বললেন, দালানের ছাদকে সবুজ করে গড়ে তোলা কোন কঠিন কাজ নয়৷ বললেন, ‘খুব সোজা ব্যাপার৷ আমরা প্রথমে চেয়েছি আমাদের কার পার্কিং ইয়ার্ডটিকে বেশ সুন্দর দেখাক৷ সে ক্ষেত্রে ভবনের সম্মুখভাগ এবং ছাদকে আর্কষণীয় করে তোলাই হচ্ছে প্রথম কাজ৷ তখন আমাদের সামনে দুটি প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়৷ এক. আমরা কি প্রচলিত উপায়েই কিছু কাজ করে আমাদের ভবনকে আকর্ষণীয় করবো নাকি একটু খরচ বাড়িয়ে সবুজ ছাদে রূপান্তর করে সত্যিই একে সুন্দর করবো? আমি একজন প্রকৃতি প্রেমি৷ আর তাই আমরা গ্রহণ করি দ্বিতীয় বিকল্পটিকেই৷'

Spätsommer in Düsseldorf
সবুজ শহর ড্যুসেলডর্ফছবি: AP

চলুন না ঘুরে আসি সেই ছাদে৷ লিফটে উপরে উঠে অবাক৷ ছাদে মাটি৷ ছোট্ট জলাধার৷ নানা ধরনের ফুলের হাসি৷ ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে৷ সবুজ গাছের পাতা দুলে বেড়াচ্ছে এধারে ওধারে৷ নাম জানা না জানা পাখির কলকাকলি৷

হাগমান অতি সম্প্রতি এই ছাদবাগান গড়ে তোলেননি৷ সে সময়টা ছিল আশির দশকের মধ্যভাগ৷ওই সময়ে শহর কর্তৃপক্ষ সবুজ কার্যক্রমের পঞ্চাশ ভাগ খরচের যোগান দিতো৷ যদিও সবুজছাদ কার্যক্রমে খরচ বেশী তবুও হাগমান বলছেন , ‘যে ভর্তুকি আমরা পেয়েছিলাম তা কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পর্যাপ্ত নয়৷ কারণ সত্যি সত্যিই ছাদ বাগানকে গড়ে তুলতে অনেক খরচ৷'

Park in Düsseldorf
শহরের মধ্যেই রয়েছে এমন সব বিশাল পার্কছবি: AP

কারণ হিসাবে তাঁর মত হচ্ছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই ছাদকে পুনর্নির্মান করতে হয়৷ আর ১০ থেকে ১৫ বছর পরপর বাগানের সব গাছ উপড়ে ফেলে, ছাদের আস্তর ফেলে দিয়ে সব নতুন করে লাগাতে হয়৷ অবশ্য হাগমানের ভাষ্য হচ্ছে, সুন্দর পরিবেশ আর জলবায়ুর প্রয়োজনেই খরচপাতির বিষয়টি ধর্তব্য নয়৷

তবে সিটি সেন্টারে ঐ পার্কিং ইয়ার্ডের মেরামতের কাজটি কিন্তু করতে হয়নি ২৫ বছরেও৷ কারণ, ঐ ভবনের ছাদটি করার সময় বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ কোটিং ব্যবহার করা হয়েছে৷ অবশ্য কারিগরী এই বিষয়টি কেবল যে এই ভবনের জন্যেই প্রযোজ্য, তাই নয়৷ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে অন্য ভবনগুলোতেও৷

১৯৮০ সাল থেকে ড্যুসেলডর্ফ শহর কর্তৃপক্ষের পরিবেশ বিভাগ ছাদবাগানের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে৷ দিয়ে আসছে নানা ধরনের সুবিধা, পরামর্শ৷ সেই বিভাগেরই একজন কমর্কতা কাটায়া হোল্জম্যুয়ালার৷ তিনি জানালেন, ‘এ ধরণের ছাদবাগান শহরের চরমাভাবপন্ন তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে৷ আর এটাই ছিল আমাদের এই প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য৷ সবুজ ছাদ বৃষ্টির পানিকে ধরে রাখে, ফলে তা বাষ্পীভূতও হয় ধীরে ধীরে৷ সবুজ ছাদের রয়েছে ঠান্ডাভাব আনার ক্ষমতা৷ এটা বিশেষ করে গ্রীস্মকালীন সময়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ আমরা সেই কাজটিই চালিয়ে আসছি৷'

পরিবেশ বাঁচাতে ড্যুসেলডর্ফের এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষও বেশ খুশি৷ খুশি কিন্তু অন্য শহরের বাসিন্দারও৷ যেমনটা বললেন বন শহরে অবস্থিত ল্যান্ডস্কেপ রিসার্চ ডেভলপমেন্ট এন্ড কনস্ট্রাকশন সোসাইটির কর্মকর্তা ক্রিস্ট্রিয়ান সোলজে আর্ডে৷ জানালেন, ‘জার্মানদের কারিগরী জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে৷ মার্কিন বিভিন্ন শহরের মানুষের কাছ থেকে সবুজ ছাদবাগানের গাইডলাইন ক্রয়ের আগ্রহীরা আমাদের সঙ্গে প্রায়ই যোগাযোগ করছেন৷' যেখানে মাটিতে গড়ে উঠছে বসতি, কমে যাচ্ছে আবাদ ভূমি, সেখানে ড্যুসেলডর্ফের সবুজ ছাদ কার্যক্রম নিয়ে আসছে একবুক স্বস্তির বাতাস৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুস সাত্তার