1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইলেকট্রনিক বর্জ্যের বিপজ্জনক রিসাইক্লিং পদ্ধতি

৮ জুন ২০১০

প্রতি বছর ভারতে হাজার হাজার টন ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্রের জঞ্জাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়৷ জার্মানি ও ইউরোপের নানা দেশ থেকেও আসে পুরানো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া কম্পিউটার, টেলিভিশন বা সিডি প্লেয়ার৷

https://p.dw.com/p/NkYu
পুরোনো জিনিসপত্র রিসাইক্লিং করতে পারলে পরিবেশ দূষণ কম হয়ছবি: picture-alliance / dpa

পুরোনো জিনিসপত্র সুষ্ঠুভাবে রিসাইক্লিং করতে পারলে পরিবেশ দূষণ কম হয়, কাঁচামাল বাঁচে৷ কিন্তু ভারতে পুরোনো ইলেকট্রনিক জিনিসগুলি যেভাবে রিসাইক্লিং করা হয়, তাতে ফল হয় উল্টো৷ তা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর৷

সবুজ রঙ'এর এক ধরণের তরল পদার্থে ভরা বিশাল এক প্লাস্টিকের পাত্রে খালি হাত ঢুকিয়ে কাজ করছেন এরকমই একটি রিসাইক্লিং প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হরিশ৷ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, তরল বস্তুটি নাইট্রিক অ্যাসিড৷ যা থেকে অনবরত বুদবুদ বের হচ্ছে৷ এসব থেকে নাক চোখ জ্বালা শুরু করে, শ্বাস কষ্ট হয়৷ হরিশ জানেন, তাঁর কাজটা স্বাস্থ্যের পক্ষে, বিশেষ করে শ্বাসনালীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর৷ কিন্তু তাঁর কিই বা করার আছে ? অন্য কোনো কিছু তো শেখেননি তিনি৷

হরিশ দিল্লির এক শহরতলীতে একটি রিসাইক্লিং কারখানায় কাজ করেন৷ সরকারের অনুমোদন ছাড়াই এই সব কলকারখানা চলছে৷ এখানে সারা বিশ্বের পুরোনো কম্পিউটার, প্রিন্টার বা এই ধরণের নানা জিনিস এনে রিসাইক্লিং করা হয়৷ অ্যাসিডে ডুবিয়ে যন্ত্রাংশ আলাদা করা ও গলানোর সময় নির্গত হয় বিষাক্ত বাষ্প৷ আর এসব থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থ আয় করে থাকে৷ বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠান টক্সিক্স লিংক'এর প্রধান রবি আগারওয়াল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই অ্যাসিডের জিনিসপত্র গলিয়ে ফেলার ক্ষমতা খুব তীব্র৷ রিসাইক্লিং'এর কাজে যেটার প্রয়োজনও রয়েছে৷ পুরোনো কম্পিউটার বা প্রিন্টারের প্ল্যাটিনাম এই অ্যাসিডে ডোবালে, শেষ পর্যন্ত শুধু তামাই অবশিষ্ট থাকে৷ যা আবার কাজে লাগানো হয়৷ কিন্তু এই অ্যাসিড অসাবধানে ব্যবহার করলে ভীষণভাবে শরীর পুড়ে যেতে পারে৷ দূষিত হতে পারে আশেপাশের এলাকা৷''

Recycling Auto China
ইলেক্ট্রনিক জঞ্জালের পাহাড়ছবি: AP

রবি আগারওয়ালের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টক্সিক্স লিংক এই ধরণের ইলেক্ট্রনিক জঞ্জালের কারখানার ওপর নজর রাখছে৷ চেষ্টা করছে মানুষ ও পরিবেশের দুর্ভোগ যতটা সম্ভব কমানোর৷ ইলেক্ট্রনিক জঞ্জালের ব্যবসায়ীরা পুরোনো যন্ত্র থেকে পাওয়া তামা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন৷ ইউরোপ তথা জার্মানি থেকেও বে-আইনিভাবে আনা হয় পুরোনো ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা৷ রবি আগারওয়াল বলেন, ‘‘ভারতে আনা ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য প্রকৃত নামে আমদানি করা হয়না৷ ‘মিশ্র ধাতু' বা এ জাতীয় অনুমোদিত নাম দিয়ে আনা হয় এসব৷ আমরা অনেক কন্টেইনার দেখেছি, যাতে এই ধরণের নাম থাকা সত্ত্বেও ভেতরে রয়েছে ইলেকট্রনিক আবর্জনা৷ আমাদের অনুমান, এই ধরণের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন জঞ্জাল প্রতি বছর ভারতে আসছে৷''

ভারতের সুদীর্ঘ সাগর তীরে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে৷ রাজধানী দিল্লিতে আবর্জনার মাঝখানে রেডিও অ্যাকটিভ দূষিত বর্জ্য পাওয়া যাওয়ার পর প্রচন্ড হৈচৈ শুরু হয়েছিল৷ সরকারের কিছুটা হলেও টনক নড়েছে তাতে৷ প্রণয়ন করা হয়েছে একটি নতুন আইন৷ রবি আগরওয়াল বললেন, ‘‘আসলে খুব সহজেই ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়৷ সব বন্দরেই স্ক্যানার বসিয়ে নজরদারিটা বাড়ানো যায়৷ কিন্তু সরকার এই বিষয়টি নিয়ে দোদুল্যমান৷ এক দিকে ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা তার কাম্য নয়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক দিকটাও ভাবতে হয় সরকারকে৷ আমি মনে করিনা যে, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে৷''

দিল্লির এক প্রান্তে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা এক শিল্পাঞ্চলে প্লাস্টিকের আবর্জনা যেখানে পাহাড় সমান হয়ে থাকতো, ইদানীং সেখানে সরকারি লোকজন ঘনঘন উপস্থিত হচ্ছেন৷ তারা শ্রমিকদের যেন তেন প্রকারে অ্যাসিড নিয়ে কাজ করা ও বিষাক্ত পদার্থ পোড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন৷ এখানকার ছোট রিসাইক্লিং কারখানাটির মালিক ভাল করেই জানেন, এই ধরণের নিয়ম কানুন সম্পর্কে৷ তবে এটা কার্যকর হবেনা বলেই তাঁর বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, এখানে ব্যবসা বন্ধ করে দিলে, অন্য কোথাও গিয়ে আবার ব্যবসা খুলবেন তিনি এবং কাজ চালিয়ে যাবেন৷ কেননা সাগরের ওপার থেকে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য যে আসতেই থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷

প্রতিবেদন : রায়হানা বেগম

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ