1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করছে জার্মান স্যাটেলাইট

২৯ জুন ২০১০

জার্মান মহাকাশ সংস্থা এক বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতায় অভিনব এক প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে গোটা পৃথিবীর এক উন্নত থ্রি-ডি মডেল তৈরি করতে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/O5hr
TanDEM X
এভাবেই পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি হবেছবি: picture-alliance/dpa

হলিউডের সফল চলচ্চিত্র ‘অবতার'এর মূল আকর্ষণই ত্রিমাত্রিক জগত৷ একের পর এক টেলিভিশন সেট বাজারে আসছে, যার পর্দায় ‘থ্রি ডি' ছবি দেখা যায়৷ এবার পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করতে শুরু হলো এক মহাকাশ অভিযান৷

‘টু ডি'র দ্বিমাত্রিক চ্যাপ্টা ছবি আর কারো মনে ধরছে না৷ তাই ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিকে ঘিরে চারিদিকে নতুন এক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এবার পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক ছবি তুলতে ‘ট্যান্ডেম এক্স' নামের এক স্যাটেলাইট পাঠানো হলো মহাকাশে৷ প্রায় ১৫ কোটি বর্গ কিলোমিটার এলাকার উন্নত ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা হবে এই প্রকল্পের আওতায়৷

Helixbahn TerraSAR X
‘ট্যান্ডেম এক্স' সবুজ ও ‘টেরাসার এক্স' লাল কক্ষপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবেছবি: DLR

প্রকল্পের রূপরেখা

‘ট্যান্ডেম এক্স' ও তার যমজ ভাই ‘টেরাসার এক্স' ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ ‘টেরাসার এক্স' ২০০৭ সাল থেকেই মহাকাশ থেকে তথ্য পাঠিয়ে চলেছে৷ প্রায় সাড়ে আট কোটি ইউরো ব্যয় করে এই স্যাটেলাইট তৈরি হয়েছিল৷ এবার ‘ট্যান্ডেম এক্স' তার সঙ্গী হওয়ার ফলে তাদের যৌথ শক্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ গোটা প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬.৫ কোটি ইউরো৷ জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর ও ‘অ্যাস্ট্রিয়াম' নামের এক বেসরকারী সংস্থা মিলে এই প্রকল্প শুরু করেছে৷ ‘অ্যাস্ট্রিয়াম' প্রকল্পের এক চতুর্থাংশ ব্যয়ভার বহন করছে৷ ২১শে জুন ১.৩ টন ওজনের এই স্যাটেলাইট কাজাকস্তানের বৈকানুর মহাকাশ কেন্দ্র থেকে রাশিয়ার একটি রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়৷ মাত্র সাড়ে তিন দিনের মধ্যেই প্রথম সঙ্কেত আসতে শুরু করে দিয়েছে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে মাদাগাস্কার দ্বিপের উত্তরাংশ, ইউক্রেন ও মস্কো শহরের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ তবে এই সব তথ্য মূলত পরীক্ষামূলক হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে৷ ছবির মান যাতে সন্তোষজনক হয়, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে৷ প্রাথমিক স্তরে দুটি স্যাটেলাইটের কক্ষপথ আলাদা৷ ধাপে ধাপে তাদের মধ্যে সমন্বয় আনা হচ্ছে৷

মিউনিখের কাছে ছোট একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে তাদের কাজকর্মের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ ৩ বছর ধরে ভূপৃষ্ঠের সম্পূর্ণ এলাকার ছবি তুলে যাবে এই দুই স্যাটেলাইট৷ ৫১৪ কিলোমিটার উপরে এক কক্ষপথে ঘণ্টায় প্রায় ২৮,০০০ কিলোমিটার গতিতে পরস্পরের মধ্যে মাত্র দু'শো মিটার ব্যবধান বজায় রেখে তারা একই এলাকার ছবি তুলে যাবে – বা আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে রাডার যন্ত্রের মাধ্যমে যে কোনো এলাকার উঁচু-নিচু সব খুঁটিনাটি বৈশিষ্ট্য ক্যামেরাবন্দি করবে৷ আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও রাডার যন্ত্র কাজ করতে পারে৷ ফলে আবহাওয়ার পরোয়া না করেই কাজ করে যেতে পারবে এই দুই স্যাটেলাইট৷ ত্রিমাত্রিক ক্যামেরার যেমন দু'টি করে লেন্স থাকে, যাদের মধ্যে সামান্য ব্যবধানের ফলেই ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা সম্ভব – ঠিক সেভাবেই দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধান বজায় রেখে পৃথিবীর ছবি তোলা হচ্ছে৷ মানুষের দুটি চোখও ঠিক একইভাবে কাজ করে৷ ফলে আমরা আশেপাশের যে কোনো বস্তুর দূরত্ব সঠিকভাবে আন্দাজ করতে পারি৷

NO FLASH Radarsatellit TanDEM X
‘ট্যান্ডেম এক্স' ও তার যমজ ভাই ‘টেরাসার এক্স'ছবি: picture-alliance/dpa

ত্রিমাত্রিক তথ্যভান্ডার

‘ট্যান্ডেম এক্স' ও ‘টেরাসার এক্স'এর পাঠানো তথ্য এসে পৌঁছচ্ছে মিউনিখের কাছে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্রমশঃ গড়ে উঠছে পৃথিবীর প্রথম নির্ভরযোগ্য ত্রিমাত্রিক মডেল৷ ভৌগোলিক বা অন্য কোনো সীমানার পরোয়া করে না স্যাটেলাইটের ক্যামেরা৷ অত্যন্ত সূক্ষ্ম সেই ছবি৷ ভূপৃষ্ঠের ৫১৪ কিলোমিটার উপর থেকেও এত স্পষ্ট ছবি তোলা হচ্ছে, যে মাত্র ৫ মিটারের তফাতও তাতে ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ চলন্ত ট্রেনের ছবিও ধরা পড়বে স্যাটেলাইটের চোখে৷ এই প্রকল্প থেকে যে ডিজিট্যাল তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তার পরিমাণ হবে প্রায় ১.৫ পেটাবাইট৷ ১ পেটাবাইট হলো ১,০০০ টেরাবাইট বা ১০ লক্ষ গিগাবাইট৷ সাধারণ ডিভিডির মধ্যে সেই তথ্য পুরলে এবং সেই সব ডিভিডি একে অপরের উপর রাখলে সেই স্তুপের উচ্চতা হবে প্রায় ৪৩০ মিটার৷

11.06.2008 DW-TV Journal Wirtschaft Minireportage Terrasar
কক্ষপথে ‘টেরাসার এক্স'ছবি: DW-TV

প্রয়োগের সম্ভাবনা

পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মডেলের কার কাজে লাগে পারে? ভূ-তাত্ত্বিকদের কাছে এমন এক মডেল স্বপ্নের মতো৷ তাঁরা যে এই তথ্য পুরোপুরি কাজে লাগাবেন, তা বলাই বাহুল্য৷ তবে এর প্রয়োগ এখানেই সীমিত নয়৷ শহর এলাকার পরিকল্পনা, জমির ব্যবহার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার মতো কাজেও ত্রিমাত্রিক মডেল অত্যন্ত কাজে লাগতে পারে৷ সমুদ্র সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রেও মূল্যবান তথ্য পাওয়া যেতে পারে৷ প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজেও ত্রিমাত্রিক মানচিত্র কাজে লাগানো হবে৷ সামরিক অভিযান অথবা বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ত্রাণ পৌঁছনোর সময় এই তথ্য কাজে লাগবে৷ শুধু সরকার, প্রশাসন বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নয় – বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ইতিমধ্যেই ৩০টি সংস্থা এবিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ ফলে এই ত্রিমাত্রিক মডেলের চাহিদা যে বিশাল হতে চলেছে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ অদূর ভবিষ্যতে গাড়ির ন্যাভিগেশন যন্ত্রের মধ্যেও হয়তো স্থান পাবে এই তথ্য৷ গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই পথ সম্পর্কে আগাম ও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে৷

জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর'এর কাছে এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্য যে কোনো প্রকল্পের মতো এক্ষেত্রেও মূল উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের ক্ষমতার প্রসার হলেও এই প্রকল্পের ব্যবহারিক দিক এতটাই বহুমুখী, যে মহাকাশ অভিযানের সার্থকতা সব স্তরের মানুষের কাছেই অত্যন্ত স্পষ্ট৷ তাছাড়া তথ্যের বাণিজ্যিক বিপণনের মাধ্যমে মহাকাশ সংস্থা কিছু আয়ও করতে পারবে, যা অর্থনৈতিক সঙ্কটের এই যুগে মোটেই ফেলনা নয়৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা. আব্দুল্লাহ আল ফারূক